বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আকর্ষণীয় ধারা হচ্ছে ছোটগল্প। যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমের কালিতে জন্মগ্রহণ করে বেড়ে ওঠে।“ভিখারিনী” গল্প দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে অনন্য যাত্রা শুরু করেন তার শেষ হয় “ল্যাবরেটরি” গল্পে মধ্যে দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্পের বজরা চালনা শুরু বাংলা ১২৯৮ সনে সেই থেকে ১৩১০ সনের মধ্যে তার বেশিরভাগ গল্প রচিত হয় । রবীন্দ্রনাথ আগাগোড়া কবি হতে চেয়েছিলেন কিন্তু মানুষ। গ্রামের মানুষ ,মেহনতি মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, বিবাহিত, অবিবাহিত, বাল্যবিবাহ বাল্য বিধবা, এক কিশোরের বেড়ে ওঠা, কিশোর কিশোরী টিন এইজ ক্রাইসি, প্রেম। সমস্ত মনব জীবন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির আঙিনায় থেকে আলোক বর্ষ দূরে। সেই জীবন দেখেই তিনি লেখা শুরু করে। ১৯০৯ সালের ২ মে শান্তিনিকেতনে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি প্রথমে কেবল কবিতাই লিখতুম, গল্পে টল্পে বড় হাত দিই নাই। মাঝে একদিন বাবা ডেকে বললেন, ‘তোমাকে জমিদারীর বিষয়কর্ম দেখতে হবে’। আমি তো অবাক; আমি কবি মানুষ, পদ্যটদ্য লিখি, আমি এ সবের কি বুঝি? কিন্তু বাবা বললেন ‘তা হবে না; তোমাকে এ কাজ করতে হবে।’ কী করি? বাবার হুকুম, কাজেই বেরুতেই হল। এই জমিদারী দেখা উপলক্ষে নানা রকমের লোকের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয় এবং এই থেকেই আমার গল্প লেখারও শুরু হয়। তিনি নিজেই লিখেছেন ‘এগুলি নেহাত বাস্তব জিনিস’। যা দেখেছি, তাই বলেছি। ভেবে বা কল্পনা করে আর কিছু বলা যেত, কিন্তু তাতো করিনি আমি।
ছোটগল্পের সাথে নদীর একটা সংযোগ আমারা কতক বিখ্যাত গল্প দেখতে পাই। এই নদী হলো পদ্মা। পদ্মার পাড়ে কিশোরের,কিশোরীর খেলা, ডুবে যাওয়া, নৌকাডুবি, সহ কৃষক জীবনে নদীর গুরুত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পের অনুপ্রেরণা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মানবসত্য’ (১৩৩৯) প্রবন্ধে বলেছেন, ‘সাজাদপুরে যখন আসতুম চোখে পড়ত গ্রাম্যজীবনের চিত্র, পল্লীর বিচিত্র কর্মোদ্যোগ। তারই প্রকাশ ‘পোস্টমাস্টার’, ‘সমাপ্তি’, ‘ছুটি’ প্রভৃতি গল্পে। তাতে লোকালয়ের চলতি দৃশ্যগুলি কল্পনার দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। আরেকটু পরিষ্কার করে যদি বলিতিনি পদ্মাবোটে চড়ে পাড়ি জমিয়েছেন আত্রাই, বড়াল, নাগর, করতোয়া, পদ্মা আর যমুনায়। বাংলাদেশের একটি নির্জন প্রান্ত; তার নদী তীর, উন্মুক্ত আকাশ, বালুচর, অবারিত মাঠ, ছায়া সুনিবিড় গ্রামে সহজ অনাড়ম্বর পল্লীজীবন, অভাবক্লিষ্ট অথচ শান্তসহিষ্ণু গ্রামবাসী- কবি বিমুগ্ধ বিস্ময়ে, পুলকে, শ্রদ্ধায় ও বিশ্বাসে এসবের অপরিসীম সৌন্দর্য আকণ্ঠ পান করেছেন। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের পল্লীজীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় শুরু হয়। পল্লীজীবনের নানা বেদনা আর আনন্দ যখন তার মনকে অধিকার করে বসলো, তখন তার ভাব ও কল্পনার মধ্যে আপনাআপনি বিভিন্ন গল্প রূপ পেতে শুরু করলো ।