মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামে এতিম দুই বোনের বাড়ির জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে ছোট চাচা মৃত শাহাদতের ছেলে কালাম, মন্টুর ছেলে শাহীন, কামালের ছেলে ইকবাল ও মোনাখালী গ্রামের জয়নালের ছেলে সোহেল ও দুই ফুপুর বিরুদ্ধে। ওই জমির দখল নিতে ভূক্তভূগী মুর্শিদা ও খুশির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে শিশু অবস্থায় মুর্শিদা ও খুশিকে রেখে তাদের মা রোজিফা খাতুন মারা যান। রোজিফা খাতুনকে হত্যা করা হয়েছে বলে গ্রামবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জন্ম দেয়। তাদের মায়ের মৃত্যু অস্বাভাবিক হওয়ায় লাশ দাফনে স্থানীয় ও পুলিশ বাধা সৃষ্টি করে। স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে দাদা শাহাদত শিশু মুর্শিদা ও খুশির ভবিষ্যত চিন্তা চকশ্যামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়কের অপরদিকে ৮ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করেন।
মুর্শিদা ও খুশির দাদা শাহাদত হোসেন বছরে চারেক আগে মারা যান। দাদা মারা যাওয়ার পর মুর্শিদা ও খুশির চাচা, ফুপু ও সৎ ভাই জমি নিজেদের দাবী করে দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যার জের ধরে বৃহস্পতিবার তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
মুর্শিদা ও খুশি ভাঙচুরের বিষয়টি রিফাত স্টোরের স্বত্বাধীকারী জাহাঙ্গীর নামের এক মুদি ব্যবসায়ীকে জানালে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরের উপর চড়াও হয়। তারা ওই দোকানে গিয়ে ভাঙচুরসহ দুই লক্ষ টাকা ক্যাশবাক্স থেকে লুট করে নেয় বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর। এবিষয়ে মুর্শিদা বলেন, আমরা যখন নাবালিকা ছিলাম তখন আমার মাকে মেরে ফেলেছে আমার বাবার পরিবারের লোকজন। আমার মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি মিমাংসা করতে আমাদের দুই বোনকে এই ৮ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দেয় আমার দাদা। আমরা সাবালিকা হওয়ার পর এই জমি দেখিয়ে আমাদের বিয়েও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শুনি এই জমিটা আমাদের আর নেই। এই জমি আমার তিন ফুফপা ও ছোট চাচা নিয়ে নিয়েছে। আমরা এতিম হওয়ায় গ্রামবাসী এই জমিতে আমাদের একটি ঘর তৈরী করে দিয়েছে। এখন আমার এই জমি তাদের দাবী করে আমাদের ঘর ভাঙচুর করে আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এই জমি ২০০৩ সালে আমরা রেজিস্ট্রি করেছি আর তারা জাল কাগজ করে ২০১৯ সালে দলিল করেছে। যা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। এই জমি নিয়ে আমার ছোট চাচা একমাস জেল খেটেছে। আমাদের ফুপুদেরও আটক করেছিলো। মামলায় রায় আমাদের পক্ষে এসেছে তারপরও তারা আমাদের দুই বোনকে এই বাড়ি থেকে উঠিয়ে দিতে চাচ্ছে।
চকশ্যামনগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, মুর্শিদা ও খুশির বয়স যখন দেড় বছর-দুই বছর তখন ওদের মা মারা যায়। গ্রামের সর্বশ্রেণীর মানুষ একত্রিত হয়ে রোজিফা খাতুনের লাশ দাফন করতে বাঁধা দেয়। পরে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা আলোচনা করে মেয়ে দুটির নামে এই জমি দিয়ে একটি আপোষ করা হয়। হঠাৎ করে ওদের দাদা মারা যাবার পর তারা দলিল তৈরী করে জমি দাবী শুরু করেছে। আমরা গ্রামের সর্বশ্রেণীর মানুষ চাই ওই জমি এতিম দুই বোনের হোক। এঘটনায় গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ ওই জমি মুর্শিদা ও খুশির দাবী করে হামলা ও ভাঙচুরের নিন্দা জানান।
তবে এবিষয়ে মুর্শিদা ও খুশির ফুপু শেলি খাতুন হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, তাদের রান্নার চুলাটা আমার বোন ভেঙ্গে দিয়েছে। আর আমার ভাইয়ের ছেলে সামান্য একটু ভেঙ্গেছে। তাদের পক্ষে মামলার রায় হয়েছে এটা আমরা শুনিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা বাবা তাদের নামে জমি দিয়েছে এটা সত্য।