তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দু:খজনক হলেও সত্য, বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম প্রধান কুশীলব বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।
জিয়া ও তার পরিবার বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী এবং সেই সুবিধাভোগীদের সৃষ্ট উপজাত হচ্ছে আজকের জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।’
সোমবার ভোরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন চত্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে দলীয়ভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল।
হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, কিন্তু জিয়াউর রহমানসহ যারা হত্যাকান্ডের প্রধান কুশীলব, তাদের বিচার হয়নি।
জাতির প্রত্যাশা হচ্ছে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানসহ যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রধান কুশীলব, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জানার জন্য তাদের মুখোশ উন্মোচন করা।
সেই লক্ষ্যে এবং বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনিরা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য সরকার কাজ করছে।’
এ দিন দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি টানা সাড়ে ১৩ বছর ধরে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশবিরোধী অপশক্তিরা অধৈর্য্য হয়ে পড়েছে, সে কারণে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম, পরবর্তীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সকল ক্ষেত্রে সাংবাদিক সমাজ কলম ধরেছে, মানুষ ও সমাজের চিন্তাকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করতে ভূমিকা রেখেছে।
পৃথিবীর কোনো সরকার শতভাগ নির্ভুলভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারেনি, পারবে না। আমাদেরও ভুলত্রুটি আছে।
কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি আড়াল করে দেশের পরিস্থিতিকে আংশিক তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করার পথ যে ইদানীং কিছু কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য স্ব স্ব জায়গায় থেকে লেখনী ও রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দায়িত্বপালনের জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি আহবান জানাই।
এসময় আন্দোলনকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভব বলেই আন্দোলনকারীদের বাধা দিতে বা গ্রেফতার করতে না করেছেন, আমরা আগেও কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দেইনি।
কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি ভাংচুর, অগ্নিবোমা, অগ্নিসংযোগ, জনগণের শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা, জানমাল ও দেশের সম্পত্তি রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায়ের প্রতিকার ও প্রতিরোধ প্রয়োজন। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।
যারা নিরীহ মানুষ, ঘুমন্ত মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে এবং যারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের দ্রুত বিচার হওয়া প্রয়োজন।
বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ আগস্টের পরিবর্তে ১৬ তারিখ পালনের বিএনপির ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া তার জন্মের তারিখ বদলে ১৫ আগস্ট পালনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, স্বীকার করে নিয়েছেন, তার স্বামী জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান কুশীলব এবং সেটির সাথে যে তিনিও মানসিকভাবে যুক্ত ছিলেন, তাও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ, রফিকুল ইসলাম রতন, ডিইউজে সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।