বসত ভিটা রক্ষা করতে গিয়ে জীবন হারাতে না হয় সেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বৃদ্ধ।
তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের ভোলাডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর বৃদ্ধ আবুল কাশেম। বসত করেন নিজের কেনা জমিতে টিনের ঝুপড়ি করে।
তারই শ্যালক ইসমাইল হোসেন ও তার লোকজনের হাত থেকে রক্ষা পাইনি সেই ঘর এবং আসবাবপত্র। জোরপুর্বক জমি দখল করতেই এমন হামলা চালিয়েছে ইসমাইল হোসেনের লোকজন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী আবুল কাশেমের।
একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৬জন আহত হয়ে কুষ্টিয়া ও গাংনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃদ্ধ আবুল কাশেমের দিন কাটছে আতংক আর হতাশা নিয়ে। থানায় অভিযোগ করেও স্বস্তিতে নেই তিনি।
জানাগেছে, ভোলাডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর আবুল কাশেম (৬৫) ৩০ বছর আগে নিজের শশুর মৃত: বাদশা মলিথার তিন ছেলে আক্তার, রবিউল হক, হাসান ও তাদের বোনের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি ক্রয় করে বসবাস করছেন। উক্ত জমি বাদশা মালিথার বড় ছেলে ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি পেয়েছে দাবী করে জবর দখল করার চেষ্টা করে।
এতে আবুল কাশেম ও তার ছেলে বাধা দিলে তাদের মারধর করে এবং বাড়িঘর ও আসবাপত্র ভাংচুর করে। এ কাজে বাঁধা দেওয়ায় ইসমাইল ও তার লোকজনের হামলায় ছোট ভাই আক্তার, রবিউল হক ও হাসানকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। আহতরা কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এসময় সংঘর্ষে ইসমাইলের দুই ছেলে তারেক আহাম্মেদ ও মশিউর রহমান আহত হয়। ইসমাইল ও তার দুই ছেলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সরেজমিনে ভোলাডাঙ্গা গ্রামে দেখা গেছে, আবুল কাশেমের টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে তার বসবাস। একমাত্র বসত বাড়িটিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে টিন গুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে ঘরের আসবাপত্র। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, আমি ৩০ বছর আগে উপজেলার হোগল বাড়িয়া গ্রাম থেকে উঠে এসে ভোলাডাঙ্গা গ্রামে বসবাস করছি। এ গ্রামে আমার আপন বলতে কেউ নেই। ইসমাইলের তিন ভাইয়ের সাথে জমি কিনেছি। ৩০ বছর পর ইসমাইল আমার বাড়ি জোর দখল করে নিতে চাই। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের মারধর করে বাড়িঘর ভাংচুর করে । তার অন্যায় কাজকে বাধা দেয় তার আপন তিন ভাই। তাদেরকেউ মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
আমি এখন জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঘরে ফিরতে পারছিনা। এবিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি। পুলিশ এপর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেইনি বলেও জানান আবুল কাশেম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রাম বাসিদের অনেকের কাছেই এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, ইসমাইল খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। গ্রামে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করাই তার কাজ। ইসমাইলের ভয়ে গ্রামের কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা। মামলাবাজ ইসমাইল হিসেবেও জানেন অনেকে।
ইসমাইল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সামাজিক কাজ করতে হলে পক্ষ বিপক্ষ থাকবেই। আমি আমার জমি দখল করতে গিয়েছিলাম। ভাইয়েদের সাথে মারামারি হয়েছে। এতে আমি ও আমার দুই ছেলে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে।
গাংনী থানার ওসি তদন্ত মনোজিৎ রায় জানান, মারামারি ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলো কিন্তু কিছু ভুল থাকায় বাদীকে ডেকে নিয়ে সংশোধন করে নেওয়া হয়েছে। আমরা অবশ্য তার অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি।