গাংনী হাসপাতালের নার্স বদলির জন্য স্বাক্ষর জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি। এদিকে নার্স আমেনা এক বিবৃত্তিতে জানিয়েছেন জালিয়াতির সাথে তিনি জড়িত নন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ জওয়াহেরুল আলম সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) সাংবাদিকদের জানান, স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন এখন তারা সিভিল সার্জনের কাছে দাখিল করেনি। তদন্ত শেষ হলেই প্রতিবেদন দাখিল করবেন তারা। তদন্তে যদি জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণ হয় তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে গাংনী হাসপাতালের নার্স আমেন নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি এক বিৃবত্তিতে সাংবাদিকের জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। হজ্বে যাওয়ার আগে আসাদুল হক লিটন তাকে একটি খাম দিয়ে ঢাকায় নার্সিং অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের দপ্তরে দিয়ে যেতে বলেছিলেন। এ খাম নিয়ে তিনি হাজ্বের উদ্দেশ্যে ঢাকায় পৌঁছান।
ঢাকায় গিয়ে খাম খুলে দেখেন নার্স রাফিজার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তাতে ১৯ জন নার্স, ২ জন আয়া এবং এক জন সুইপারের স্বাক্ষর আছে। মূলত এ স্বাক্ষর জালিয়াতি বলে মনে হয় নার্স আমেনার কাছে। তখন তিনি খাম অধিদপ্তরের জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। পরে হজ্জ থেকে ফিরে হাসপাতালে গিয়ে নার্স রাফিজার হাতে ওই কাগজপত্র তুলে দেন। পরে রাফিজা অভিযোগ করলে তদন্ত শুরু হয়।
নার্স আমেনা আরও জানিয়েছেন, তদন্তের কমিটির কাছে যা সত্য তাই বলেছি। প্রধান সহকারি আসাদুল হক লিটন তাকে খাম দিয়েছিলেন এবং সেই খামের মধ্যে নার্স রাফিজার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান আমেনা খাতুন।
মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটি বিষয় এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নাস রাফিজাকে ফাঁসানো হচ্ছে এই সত্য অনুধাবন করতে পেরেই বিষয়টি তিনি ফাঁস করেছেন। রাফিজার সাথে তার কোন প্রকার বিরোধ নেই বলেও জানিয়েছেন নার্স আমেনা খাতুন।
প্রসঙ্গত, গাংনীর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রাফিজা খাতুনের সাথে প্রধান সহকারি অর্থাৎ বড় বাবু হিসেবে পরিচিত আসাদুল হক লিটনের বিরোধ দৃশ্যমান ছিল হাসপাতালে কর্মরতদের কাছে। এর জেরে নার্স রাফিজা খাতুনকে গাংনী হাসপাতাল থেকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেন লিটন।
অভিযোগে জানা গেছে, আসাদুল হক লিটন নার্সিং অধিদপ্তর বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে নার্স রাফিজা খাতুনের নামে অফিসের শৃংখলা ভঙ্গের নানা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এই অভিযোগের স্বপক্ষে ১৯ জন নার্স, ২ জন আয়া ও ১ জন সুইপারের স্বাক্ষর ছিল।
যার ফরোয়াডিং লেটারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষরে করা হয়। নার্স আমেনা খাতুন বিষয়টি ফাঁস করার পর দেখা যায় নার্স, আয়া, সুইপার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্বাক্ষর সবই জাল। যার তদন্ত করছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গঠিত একটি তদন্ত টিম।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে নার্স, আয়া ও সুইপার মিলে ২২ জন স্বাস্থ্য দিয়েছেন যে ওই আবেদন করা স্বাক্ষর তাদের নয়। জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে যে রাফিজাকে বদলি করার অপচেষ্টা করা হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে ফুটে উঠেছে স্বাক্ষীদের বয়ানো মাধ্যমে।
তবে অভিযোগ সব অস্বীকার করেছেন বড় বাবু অথাৎ প্রধান সহকারি আসাদুল হক লিটন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ জালিয়াতির সাথে তিনি জড়িত নন। নার্স আমেনাই ষড়যন্ত্র করেছে।