মেহেরপুরের গাংনীতে ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়া ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে রোপা আমন আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে লোডশেডিং হচ্ছে ৭-৮ ঘণ্টা। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের অজুহাতে ডিজেলের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সেচ দিতে না পারায় বীজতলার চারা শুকিয়ে বিবর্ণ হচ্ছে।
আবার যারা চারাবীজ রোপণ করেছে সেচ দিতে না পারায় তাদের জমি শুকিয়ে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। এতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখনও সময় আছে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে লক্ষ্য মাত্রা পুরুণে সমস্যা হবে না।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষে চাষিরা প্রয়োজনী প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
চাষিরা বীজতলা তৈরী করেছেন ৬৮০ হেক্টর। সরকারীভাবে দুই হাজার ২৭৫ জন কৃষককে বীজ ও সার প্রনোদনা দেয়া হয়। এখনই ধানগাছ রোপনের সময়। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও লোডশেডিংয়ের কারণে চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে।
চাষিরা ১০শতাংশ জমিতে চারাবীজ রোপন করতে পেরেছেন। এতে করে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শংকা হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি না থাকায় বেশির ভাগ জমিই অনাবাদি হিসেবে পড়ে আছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের আমন বীজতলাগুলো প্রখর রোদে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে।
এসব বীজতলার চারা রোপণ করলে পর্যাপ্ত ফল নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তবে কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থায় বাড়তি খরচ করে শ্যালো যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন। অন্যদিকে যারা চারার রোপন করেছেন পানির অভাবে ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে।
বাড়তি দামে ডিজেল কিনে অনেকেই সেচ দিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ সেচপাম্প বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় কৃষকরা সেচ দিতে পারছেন না।
কৃষকেরা বলছেন, জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপণ করা হয়। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁরা আমন চাষাবাদ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।
মূলতঃ বর্ষাকালে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে কৃষকেরা রোপা আমন চাষ করে থাকেন। সাধারণত বীজতলায় তৈরি হওয়া চারা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু অনেক কৃষকের চারার বয়স দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তারা রোপন করতে পারছেন না। অনেকেই ডিজেল চালিত সেচপাম্প দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও ডিজেল কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। একই অবস্থা সারের ক্ষেত্রে। সংকটের অজুহাতে সর্বত্র দাম বাড়ানো হচ্ছে কেজিতে দুই তিন টাকা।
সহড়াবাড়িয়ার কৃষক শরিফুল ইসলাম বাকি জানান, তিনি ১৫০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বীজতলা তৈরীসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়ার পরও রোপন করতে পারছেন না। মাত্র ৫০ বিঘা জমিতে বীজ রোপন করেছেন।
বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। নতুন করে ডিজেল চালিত সেচপাম্পও কিনতে পারছেন না। এদিকে বীজতলায় চারার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় সেগুলোও এখন নষ্টের পথে। এভাবে চলতে থাকলে আমনের চারারও সংকট দেখা দেবে। লোডশেডিং না কম হলে সব জমিতে চারা রোপন করা সম্ভব হবে না।
রাইপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, তিনি এবার ১৫ বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষের লক্ষ্য নিয়ে বীজতলা তৈরী করেন। চারার বয়স এখন একমাস। ওই জমিতে পাট রয়েছে। পানির অভাবে পাটজাগ দিতে না পারায় জমিতে পাট রয়ে গেছে ফলে ধানের চারা রোপন করতে পারছেন না। চারাবীজ শুকিয়ে গেছে। নতুন করে চারা দেয়া সম্ভবও হচ্ছে না। আবার পাটক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচপাম্প দিয়ে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে কিন্তু লোডশেডিং ও ডিজেল সংকটের অজুহাতে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সারের দামও রাখা হচ্ছে বেশি।
মেহেরপুর পল্লী বিদুতের গাংনী জোনাল অফিসের ডিজিএম আবুল কাশেম জানান, চাহিদার তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক বিদ্যুৎ। সে অনুযায়ি ফিডারে পালাক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি জাতীয় সমস্যা তাই স্থানীয়ভাবে কিছুই করার নেই।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ লাভলী খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে চাষিদেরকে উন্নত জাতের ধান চাষের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী জাত ১৫ আগস্ট ও স্বল্প মেয়াদী জাত ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রোপন করা যায়। অনাবৃষ্টি ও লোডশেডিংয়ের কারণে চাষাবাদের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে ও লোডশেডিং কমে গেলে এখনও রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায় হবে না।
সার ও ডিজেলের বাড়তি মূল্যে ব্যাপারে সার ও ডিজেল বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এই কৃষি অফিসার।