বর্তমান সময়ে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছেন অনেক মেয়ে। দেশের শহর অঞ্চলগুলোর চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। বাল্যবিবাহের জন্য ব্যাপক অর্থে দায়ী শিক্ষার অভাব এবং দারিদ্রতা। বাংলাদেশের শহর অঞ্চলের মানুষেরা গ্রামের মানুষদের তুলনায় অনেকটাই শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার কারণে শহর অঞ্চলে বাল্যবিবাহ পূর্বের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কিন্তু আজও বাংলাদেশে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে অসংখ্য গ্রাম। একদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয় অপরদিকে দারিদ্রতার কারণে মা-বাবারা তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভরণপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজছে।
ফলে পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও বাল্যবিবাহকে বরণ করে নিচ্ছেন অনেক মেয়ে। অবলীলায় ঝরে পড়ছে এ দেশের হাজারো সুপ্ত প্রতিভা। শুধু যে প্রতিভা গুলোই ঝরে যাচ্ছে এমন নয়। প্রতিভা ঝরে যাওয়ার সাথে সাথে হুমকির মুখে পরছে তাদের জীবন। অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহের ফলে অধিকাংশ মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া বাল্যবিবাহের ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের মতো ঘটনা আমাদের দেশে প্রতিদিন ঘটে চলেছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের জন্য মা ও শিশু উভয়ই ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এ ছাড়াও গর্ভধারণ, গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সন্তান জন্মদান সম্পর্কিত জ্ঞানের অপ্রতুলতার জন্য অনেক মা ও শিশুর জীবন পড়ছে ঝুঁকির মুখে। এখনো আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য মা ও শিশু মারা যাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়সে গর্ভধারণের জন্য।
এখন সময় এসেছে বাল্যবিবাহের মতো ক্ষীণ মন-মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে আমাদের বাড়াতে হবে জনসচেতনতা এবং ঘটাতে হবে শিক্ষার প্রসার, আর কাজ করতে হবে দারিদ্র বিমোচন। তাহলে বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। যদি আমরা সকলেই নিজেদের জায়গা থেকে চেষ্টা করি এবং প্রশাসন কঠোর ভাবে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে হয়তো বাল্যবিবাহ থেকে বাঁচবে হাজারো প্রাণ।