আগমন ঘটেছে আরবী নববর্ষের ফযিলত পূর্ণ মহররম মাসের। আরবি হিজরি সনের এটিই প্রথম মাস। ইসলামি তারিখ বা হিজরি তারিখের হিসাব রাখা মুসলমানদের জন্য ফরজে কেফায়া হিসেবে ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদগণ মতমত দিয়েছেন। পৃথিবীর সূচণালগ্ন থেকেই আল্লাহ তায়ালা বারোটি মাসের সংখ্যাই নির্ধারণ করে রেখেছেন। পবিত্র আল-কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তায়ালার বিধানে মাসের সংখ্যা বারোটি নির্ধারিত রয়েছে আল্লাহ তায়ালার কিতাবে । এই বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস হচ্ছে নিষিদ্ধ মাস; এটা আল্লাহর প্রণীত নির্ভূল ব্যবস্থা, অতএব এসকল মাসে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করোনা।’ (সূরা তাওবা-৩৬)
আরবি নববর্ষের আগমনে আমাদের করনিয় হলো দোয়া পড়া। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে এই দোয়া পড়তেন,” হে আল্লাহ! আমাদের জন্য চাঁদটিকে নিরাপদ, ঈমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত করো। হে নতুন চাঁদ! আল্লাহ তায়ালা আমারও প্রভু তোমারও প্রভু।”(সুনানে তিরমিজি-৩৪৫১, হাদীসটি সহীহ)।
হিজরি সনের সূচণাঃ জাহেলিয়াতের সময় আরবদের মধ্যে গোত্রগত বিভাজনের কারণে নানান ধরনের বর্ষ গণনা করা হতো। বিভিন্ন প্রকারের এসব সনের মধ্যে হযরত নুহ আলাইহিস সালামের মহা প্লাবনের সন, ইয়েমেনের খ্রিষ্টান বাদশা আবরাহা কর্তৃক কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য প্রেরিত হস্তিবাহিনীর নামে আমুল ফিল, আমুল ফুজ্জার, আমুল ফতেহ, হবুতি, লুই এবং খসরু সন উল্লেখযোগ্য। ইবনে সমরকান্দি (রাহি.) বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বর্ণীত আছে, হযরত আবু মুসা আল আশয়ারি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একবার হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট লিখিত পত্র মারফতে জানান যে, ‘আপনি আমার নিকট পত্র পাঠাচ্ছেন ,কিন্তু তাতে কোন তারিখ উল্লেখ নেই’। পত্রটি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট পৌছালে তিনি অধিনস্তদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে হিজরী সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন । আল্লামা ইবনুল আছির (রহি.) এই মতকে প্রশিদ্ধ ও বিশুদ্ধতম মত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । (আল-কামিল ফিত তারিখ-১/১২)।
বাংলায় হিজরি সনঃ বাংলায় মুসলিম শাসনের শুরু হয় ৫৯৮ হিজরি মোতাবেক ১২০৯ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলায় হিজরি সন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে । যা জাতীয় সন হিসেবে কার্য্যকর থাকে দীর্ঘ ৫৫০ বছর । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের মধ্যমে হিজরি সনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অবসান ঘটে। বৃহত্তম মুসলিম জনবসতি সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে ইসলামী নববর্ষ হিজরি সন পালনে নেওয়া হয়না সরকারি বা বেসরকারি বিশেষ কোন উদ্যোগ। সরকারিভাবে হিজরি সন উদযাপনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবী।