মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) হত্যাকা- এবং তার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নিহতের ভাই তাওফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে মেহেরপুর সিনিয়র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেন।
তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আলহাজ ছমির উদ্দীনের বড় ছেলে।
তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও ২০১৪ সালে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান, এএসসি আব্দুল জলিল, ওসি ডিবি বাবুল আক্তার, সদর থানার ওসি রিয়াজুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমিন মজুমদার ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফরিদ হোসেন, র্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন আশরাফ হোসেনসহ পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যসহ ১৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০/৩০ জন আসামি রয়েছেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালিন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামকে।
মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারী মেহেরপুর শহরের ইসলামি ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা তৎকালিন এসপি নাহিদুল ইসলামের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে রাত ১১টার দিকে বামনপাড়া শশ্নানঘাটে তারিকের উপর অমানসিক নির্যাতন ও বুকে, পেটে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর বিষয়টি বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির ফাঁসির আদেশের পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বুনো উল্লাস সহকারে জামায়াত নিধনের স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শহরে মিছিল বের করে। মিছিলটি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বাড়ির সামনে দিয়ে তার দোকান মেসার্স তাওহিদ অটোতে হামলা চালায়। দোকানের সার্টার ভেঙ্গে নগদ টাকা, মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দোকানের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আসামিরা দোকানের দোতলায় অবস্থিত তারিকের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। আসামিরা কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বাড়ির সামনে।
এ ঘটনায় মেহেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদি তাওফিকুল ইসলাম জানান, অসহনীয় নির্যাতনের শিকার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন সময় অসহায় সময় পার করেছেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। আসামিদের যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয় তাহলে আমাদের মত আরও কোন পরিবারের সন্তান হারাতে হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে বাদি পক্ষের আইনজীবী মারুফ আহম্মেদ বিজন জানান, বিরোধী মত দমনের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নৃশংসভাবে তারিককে গুলি করে হত্যা করেছিল।