মেহেরপুর জেলায় আবারও দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গত এক মাসে জেলার তিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা নিয়েছে পাঁচ শাতাধিক গরু। তবে এই হিসেবের বাইরেও বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিনই নতুন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু। এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তবে বিভিন্ন সমস্যার সমুনা দেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এখন আক্রান্তের সংখ্যা কমছে।
গবাদিপশু (গরু-মহিষ) এর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগটি শুধুমাত্র গরু ও মহিষকে আক্রান্ত করে। মেহেরপুর জেলায় গত ২০১৯ সালের পর এবারই বেশি আক্রান্ত হয়েছে। পরবর্তীতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়েছিলো দুই বছর এ সমস্যা ছিলো না। এবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটি মাছি, মশা, আঠালি ও ব্যবহৃত নিডল ও সিরিঞ্জ একাধিক বার ব্যবহারের মাধ্যমে রোগটি বিস্তার লাভ করে। রোগাক্রান্ত হলে গরুর দুধ উৎপাদন কমে যায়, গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন কমে যায়, চামড়ার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। নতুন এই রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে খামারি ও চাষিরা। গত এক মাসে মেহেরপুর সদর উপজেলা, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় পাঁচ শতাধিক রোগাক্রান্ত পশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে এখনই এর প্রতিকার করতে না পারলে এ জেলার খামার মালিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটি ১৯২৯ সালে প্রথম জাম্বিয়াতে দেখা যায়। এরপরে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে আর্মেনিয়া, কাজাখস্থান, আজারবাইজান ও আশে পাশের দেশে দেখা যায়। সার্বিয়া, বুলগেরিয়ায়, সাইপ্রাস ও কসোভোতে ২০১৬ সালে লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দেয়।এ বছর এশিয়া মহাদেশের চিন ও ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা যায়।
মেহেরপুর পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ডলি খাতুন জানান, তিনি পঁচটি গরু পালন করেন। ৯-১০ দিন আগে হঠাৎ একটি গরু জ¦র এসে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে তার পরে দেখতে পান গরুর শরীরে চামড়া গোল গোল আকৃতিতে ফুলে উঠেছে। তারপর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে আসলে চিকিৎসক জানান এটা ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। এখনও এ রোগের অলাদা কোন ঔষুধ বা চিকিৎসা নেই তবে অন্যান্য সমস্যার চিকিৎসা দিলেই ভালো হয়ে যাবে। এখন গরুটি মোটামুটি সুস্থ আছে। তবে বাকিগুলো নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের পারিবারিক খামারি শান্তনা খাতুন জানান, তিনি ৪ টি গাভী পালন করেন। একটি গাভির বাচ্চা হয়েছে এক মাস। ১০ দিন হলো এই ছোট বাচ্চার এ রোগাক্রান্ত হয়েছে। বাকি তিনটি গাভীও অল্পদিনে বাচ্চা প্রসব করবে। সেগুলো যদি আক্রান্ত হয় তাহলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে। ভ্যাক্সিন না দিতে পারলে আমাদের মতো মানুষকে পথে বসতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, আবারও এলএসডি রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগ এসকল গবাদিপশুর চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে মেহেরপুরে এখন পর্যন্ত এ রোগে কোন পশু মারা যায়নি। এ রোগে শুধুই গবাদিপশু (গরু-মহিষ) আক্রান্ত হয় কিন্তু মানুষ আক্রান্ত হয় না। তবে এই রোগাক্রান্ত পশুর মাংশ খাওয়া ঠিক হবে না। খামারী ও গবাদিপশু পালনকারীরা সচেতন হওয়ায় রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করেছে।