• বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
সংবিধান মেনে যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: হানিফ ঝিনাইদহে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান ঝিনাইদহে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যুবলীগ নেতাসহ আহত ৪ স্বতন্ত্র প্রার্থী মানেই ডামি-যাদের নলও নাই গুলিও নাই: ফরহাদ হোসেন চুয়াডাঙ্গায় জাকের পার্টির আব্দুল লতিফ খানের মনোনয়নপত্র জমা কুষ্টিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফের শোডাউন গাংনীতে অবরোধের পক্ষে জাসাসের বিক্ষোভ মিছিল মেহেপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাঃ সাগরকে বরণ কুষ্টিয়ায় নৌকার বিপক্ষে লড়বেন সাবেক দুই এমপি ও হানিফের আসনে মেয়র পুত্র তনু সারাদেশে নির্বাচনের উৎসবমুখর আমেজ তৈরী হয়েছে: হানিফ

মেহেরপুরে কপির ভেজাল বীজে সয়লাব মাঠ-কপাল পুড়েছে চাষিদের

বিবর্তন প্রতিবেদক
Update : বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
মেহেরপুরে কপির ভেজাল বীজে সয়লাব মাঠ-কপাল পুড়েছে চাষিদের
মেহেরপুরে কপির ভেজাল বীজে সয়লাব মাঠ-কপাল পুড়েছে চাষিদের

মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগর-বন্দর মাঠে ভেজাল বীজে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বাঁধা কপিতে। নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় প্রায় একশ বিঘা জমির বাঁধাকপির পাতা বাঁধেনি অভিযোগ ভুক্তভূগী চাষিদের। এতে অন্তত প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা। জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে এধরণের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবী কৃষকদের। ভেজাল বীজ দিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলেও দাবী করেছেন তারা।

সরেজমিন চকশ্যামনগর-বন্দর মাঠে দেখা গেছে নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় মাঠের পর মাঠ কপির আবাদ হলেও কপির পাতা বাঁধেনি। কপির পাতা কুকড়িয়ে ও পচে যাচ্ছে। জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কপির পাতা না বাঁধার কারণে অনেকে কপি নষ্ট করে জমি চাষ দিচ্ছেন অন্য জাতের কপি বা অন্য ফসল লাগানোর জন্য।

চাষিরা জানান, স্থানীয় চকশ্যামনগর-বন্দর এলাকার সার ব্যবসায়ী আনারুলের কাছে থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহকৃত রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাঁধছে না। অন্যরা অন্যান্য কোম্পানির দেওয়া বীজ রোপন করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। তারা জানান, একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোকড়ানো। পাতা পচে যাচ্ছে। সার বীজ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। চাষীদের দাবি বীজ ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে আসবে।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কালু মন্ডল বলেন, স্থানীয় বীজ ডিলার আনারুলের কাছে রাজাসান জাতের বীজ কিনে এক বিঘা জমিতে কপি রোপন করি। এতে আমার ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। অন্যরা কপি বিক্রি করলেও আমার কপি এখনও পাতা বাধেনি। উপায় না পেয়ে সমস্ত চারা ভেঙ্গে জমি চাষ দিয়েছি। এখন অন্য জাতের কপি বা অন্য ফসল করতে হবে।

কৃষক মিলন বলেন, ১৫ হাজার টাকায় জমি লীজ নিয়ে আনারুলের কাছ থেকে রাজাসান জাতের বীজ নিয়ে কপি আবাদ করেছিলাম। কপিতেও ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন কপির পাতা বাধেনি। কপির পাতা কুকড়ে যাচ্ছে, পচে যাচ্ছে। আনারুল আমাদের আসল রাজাসান বীজের কথা বললেও এখন দেখছি এগুলো ভেজাল বীজ। এমন অবস্থায় আমরা কার কাছে গিয়ে উদ্ধার পাবো।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আনিছদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কপি চাষ করে আসছি। অন্যান্য জাতের কপি চাষ করি। এ বছরে আনারুল রাজাসান কপি ভালো বলে প্রচার প্রচারণা চালালে আমি আনারুলের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করি। ১ মাস ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কপির পাতা বাধেনি। এবিষয়ে আনারুলকে অবগত করলেও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। মাঠে অন্য জাতের কপি বেচাকেনা চলছে। কিন্তু আমাদের কপি এখনও পাতাই বাধেনি। আমরা বড় ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়েছি। কি করবো আমরা। তারা আমাদের কিছু ক্ষতিপূরণ দিলে আমরা এতবড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতাম।

আরেক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক নাজের আলী বলেন, আমি গত চার বছর যাবৎ রাজাসান কপি চাষ করছি। গত বছরে ভালো ফলন পেয়েছি। এবছরে মেহেরপুর বড়বাজারের সুমনা বীজ ভান্ডার থেকে বীজ সংগ্রহ করেছে। সুমন বলেছিল বীজের দাম একটু বেশি লাগবে কিন্তু বীজ ১ নম্বর হবে। তার কথামতো বীজ নিয়ে চারা দিই কিন্তু আজ ৩৭ দিন পার হলেও কপির পাতা বাধার কোন আকার দেখতে পাচ্ছি না। আমি চায়ের দোকান চালিয়ে ভাত করে খাই। এই কপি চাষে আমি ৬০ হাজারের উপরে খরচ করেছি। আমি ধারদেনা করে কপিতে খরচ করেছি। এই কপি যদি না হয় আমি কি করে সংসারে দাঁড়াবো বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এবিষয়ে আনারুল ইসলাম বলেন, আমার মূলত সার ও বিষের ব্যবসা। আমি মেহেরপুর বড় বাজারের সুমনা বীজ ভান্ডার থেকে বীজ এনে চাষীদের দিয়েছি। কপির পাতা বাধেনি বিষয়টি আমি শুনেছি। এবিষয়ে সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে কিন্তু তার কোন সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন ভাবে সে সময় ক্ষেপন করছে। যেহেতু চাষীদের ক্ষতি হয়েছে তাদের সপ্তাহখানেক পর একটা ব্যবস্থা করা হবে।

সুমনা বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুমন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন বীজ বিক্রিই করিনি। যে চাষী আমার কথা বলেছে আমি তাকে চিনি না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চাষিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category