মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মাঝপাড়ায় চলাচলের একমাত্র রাস্তায় ঘর নির্মাণ করে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী পায়ে চলাচলের কথা থাকলেও চারটি পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনযাপন করছে।
চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় গবাদি পশু ও ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অবরুদ্ধ বাসিন্দারা। পরিবারের বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। রাস্তা বন্ধ হওয়ার কারণে অন্য প্রতিবেশীদের বাড়ির উপর দিয়ে বা বেড়া টপকিকে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের অনেক অনুরোধ করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য পথ চাওয়া হয়, কিন্তু তারা শোনেন নি। চলাচলের পথে ঘর নির্মাণ করেছেন।
এতে লোকজন ও বাড়ির পোষা গবাদি পশু ও ফসল আনা-নেওয়া করতে পারছেন না। আবার ছেলে-মেয়েরা স্কুলেও যেতে পারছে না। এক রকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন চারটি পরিবারের প্রায় ৩০ জন সদস্য।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় শত বছর ধরে বাপ দাদার সময় থেকে তারা ওই স্থানে বসবাস ওই পথ দিয়ে চলাচল ও মাঠের ফসল ঘরে তুলতেন। চলাচলের পথটি মাঝপাড়া মৌজার আরএস ৫৪৫ নং খতিয়ানের ১৬১৮ নং দাগের ০.২৫ একর জায়গাটি (খ তফসিল) অর্পিত সম্পত্তি হলেও সেখানে দখল রয়েছে বিবাদী পক্ষ মৃত দয়াল মন্ডলের ছেলে আজিমউদ্দিন। অর্পিত সম্পত্তি হওয়ায় আজিমদ্দিনের কোন রেকর্ড নেই। বর্তমানে ওই সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তবে জমি তাদের দখলে থাকলেও চলাচলের রাস্তা ছিলো উন্মুক্ত।
ভুক্তভোগী মজিদ দাবি করেন, গত ৬ মাস ধরে রাস্তার অংশটুকু পুরোপুরি নিজের দখলে রাখতে বিভিন্ন পাইতারা শুরু করে তারা। চলাচলের রাস্তা নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ দীর্ঘদিনের। সেই দ্বন্দের জেরে চলাচলের পথের উপর একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন আজিমউদ্দিন। অপরদিকে আরেক প্রতিবেশির ঘরের প্রাচির নির্মাণ করেন ওই জমির পথ ঘেষে। এতে পথটি চলাচলের প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জমি জবরদখল মর্মে মেহেরপুর অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ১৪৫ ধারায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন আজিমদ্দিন।
পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট লিউজা উল জান্নাহ ওই নালিশী জমি ১ম পক্ষের ভোগদখলে থাকবে তবে ২য় পক্ষের পায়ে চলার পথে বাঁধা প্রদান থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী গত ৭ সেপ্টেম্বর মুজিবনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত রত্ন সরজমিনে গিয়ে ওই জমির এক অংশ দিয়ে পায়ে হাটার একটি রাস্তা বের করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতেই ঘটে বিপত্তি।
জমির শেষ সীমানা দিয়ে ৫ ফিট রাস্তা মাপজোক করে খুটি বসানোর সময় আজিমদ্দিন, পরিবারের লোকজন ও কয়েকজন বহিরাগতরা আদালতের আদেশ অমান্য করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন। পরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত রত্ন সরকারি কাজে বাধা প্রদান করা দুই ব্যক্তিকে মুজিবনগর উপজেলায় নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সতর্কতামূলক জরিমানা করেন।
এদিকে জমির দখলে থাকা আজিমউদ্দিন বলেন, জমি আমাদের দখলে আছে কিন্তু আমাদের কোন রেকর্ড নেই। রেকর্ডের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আদালতে মামলা করেছি যা এখনো চলমান। মামলায় যে রায় হবে আমরা মেনে নেব। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোন রাস্তা দিবো না।
অবরুদ্ধ ভুক্তভোগী মজিত বলেন, একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় আজ আমরা গৃহবন্দী। পরিবারের কেউ মারা গেলে কবরে নেওয়ার পথটুকুও নেই। আজিমউদ্দিনের করা মামলায় আদালত আমাদের পায়ে চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছেন। আমাদের পায়ে হাটার রাস্তায় বাঁধা দিতে নিষেধ করেছে কিন্তু তারা আদালতের আদেশ মানছে না। এসিল্যান্ড স্যার এসে রাস্তার ব্যবস্থা করলেও সেটাও তারা মানেনি। বরং তাদের বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ যেনো পায়ে হেঁটে আমরা চলাচল করতে পারি সেই ব্যবস্থাটা যেন করে দেয়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জমিটি “খ” তফসিল ভুক্ত জমি। ৬ মাস আগে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা বের করেছিলাম। তখনও তারা মানেনি। বেশ কয়েকদিন আগে আদালতের আদেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত রত্ন সার্ভেয়ার নিয়ে চলাচলের পথটি উন্মুক্ত করে সীমানা নিধার্রণ করে।
তাৎক্ষনিক কিছু আজিমদ্দিনের পরিবারের লোকজন ও বাহিরের লোকজন এসে সরকারী কাজে বাঁধার সৃষ্টি করে। তারা সীমানা নিধারণের খুটি তুলে ফেলে দেয় ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন। সে সময় সরকারী কাজে বাঁধা দেওয়ার অপরাধে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। তাতেও তারা ক্ষান্ত না হয়ে আরও বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।