কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমের শুরুতেই সোনালি আঁশ পাটের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি পাচ্ছেন কৃষকরা।
ভালো দাম পাওয়ায় স্বস্তি ও খুশিতে আত্মহারা এ জেলার পাট চাষিরা।
দাম ভালো পাওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার কষ্টের কথা ভুলে গেছে।
কুষ্টিয়ার পাট প্রধান চাষ এলাকা কুষ্টিয়ার সদর, খোকসা, কুমারখালী, ইবি, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার কৃষকরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম বেশি।
গত বছর এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
কিন্তু এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায়।
প্রতি বিঘায় শুধু পাট বিক্রি করেই কৃষক লাভবান হচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
সেই সঙ্গে পাটখড়ির দাম যুক্ত করলে প্রতি বিঘায় এখন কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
জমিতে দেশি, রবি-১, মোস্তা, জেআরও এবং তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়েছে।
তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুষ্টিয়ার চাষিরা।
বৃষ্টি ভালো মত না হওয়ায় পুকুর-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি না থাকায় এবার পাট জাগ দেওয়ার অনেকে এলাকায় চাষীদের সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে।
তবে বড় বড় নদীতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে পাট এনে জাগ দিতেও দেখা গিয়েছে।
তবে কৃষকরা বোলছে যেহেতু পাটের ভালো দাম পাচ্ছি তাই কষ্টের কথা মনে আর আসছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় পাটচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কেউ জমি থেকে পাট কাটছেন, কেউ পাটের বোঝা বাঁধছেন, কেউ কেউ মাথায় করে সেই বোঝা নিয়ে যাচ্ছে নদী-খাল কিংবা পুকুরে।
আবার অনেক জায়গায় পাট জাগ দিতেও দেখা গাছে । অনেকে আঁশ ছাড়িয়ে, পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন।
কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়ার মোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরের পাটের দাম বেশি।
গত বছর পাটের মণ ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। এবার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া এবার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। এতে আমরাও খুব খুশি।
দৌলতপুর উপজেলার কৃষক লিটন হোসেন বলেন, এ বছর চার বিঘা পাটের চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। খরচ বাদে দ্বিগুণ লাভ হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার চাষি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। তাতে ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছিল।
এবার দুই বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ পাট ঘরে তুলেছি। এবার লাভ ভালো হয়েছে। কারণ আগের বছরের চেয়ে দামও বেশি, ফলনও বেশি।
পাটের সঙ্গে সঙ্গে পাটখড়ির চাহিদাও বেশি। প্রতি বিঘায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকার পাটখড়ি পাওয়া যায়। সব মিলে চাষিরা খুশি।
জ্বালানির কাজ ও বেড়া দেওয়ার কাজে পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য দিন দিন পাটখড়ির দাম ও চাহিদা বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড.হায়াত মাহমুদ জানান, গত বছরের চেয়ে উৎপাদন, চাষের পরিমাণ ও দাম এ বছর বেশি।
পাট চাষের উপযোগী আবহাওয়ার ফলে ফলন বেশি পেয়েছেন কৃষক। বাজারে পাটের দাম ভালো যাচ্ছে।
আশা করি আগামী বছর কৃষকরা পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। আগামীতে আবাদ আরও বাড়বে। তিনি আরো বলেন, পাট অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাট চাষিদের প্রণোদনা প্রকল্পের মাধ্যমে পাট বীজ, রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। মূলত পাটের দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।