• মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন

দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন সমাজসেবার সহকারি পরিচালক ফজলে রাব্বী

বিবর্তন প্রতিবেদক:
Update : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন সমাজসেবার সহকারি পরিচালক ফজলে রাব্বী
দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন সমাজসেবার সহকারি পরিচালক ফজলে রাব্বী

মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সাবেক উপপরিচালক বর্তমানে সহকারী পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী। সহকারি পরিচালক হলেও দীর্ঘ প্রায় ৫ বছরে ৩ বার একই জায়গায় ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

কোন উপপরিচালক আসলে ৪ থেকে ৫ মাসের বেশি সময় থাকতে পারেননি। শুরু থেকেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে তিনি দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে।

বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সাথে সক্ষতা গড়ে যেমন করেছেন একক রাজত্ব, তেমনি একের পর এক অনিয়ম আর দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ। সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও তার অনুসারীদের নানা অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তিনি।

ফজলে রাব্বীর বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য। উপরোক্ত অভিযোগ ছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রশিক্ষণ মঞ্জুরি খাতে ১০ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা হতে ১ম ও ২য় কিস্তি হিসেবে ৩২টি জেলাকে ৪০ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য ৫ কোটি ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে, প্রশিক্ষণ ভাতা (মাথাপিছু দৈনিক), প্রশিক্ষকদের সম্মানী, কোর্স পরিচালকের সম্মানি, কোর্স সমন্বয়কের সম্মানী, সাপোর্ট স্টাফদের সম্মানী, প্রশিক্ষণ উপকরণ ও প্রশিক্ষণার্থীদের সকাল ও দুপুরের খাবার, ভেন্যু ভাড়া, প্রশিক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রশিক্ষণোত্তর সহায়তা।

সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে স্মারক নম্বর ৪১.০১.০০০০.০৫৪.১৪.০০৩.২১.১৬ গত ১৯/০২/২৪ তারিখে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ৪০ দিনের বরাদ্দ পায় মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা। নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, উপযুক্ত প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন, প্রকৃত সুবিধাভোগীদের যাচাইবাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে প্রকৃত অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বাদ দিয়ে বিত্তশালী, ব্যবসায়ী, স্বাবলম্বীদের প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষনার্থীদের ভুয়া তালিকা, প্রশিক্ষণ ভাতা, ভুয়া স্বাক্ষর করে প্রশিক্ষকদের সম্মানী আত্মসাৎ, নিন্মমানের সেলাই মেশিন প্রদান, প্রশিক্ষণ উপকরণ, খাবার ও ভেন্যুর ভুয়া বিল, ভাউচার করে করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্বপ্নময়ী ট্রেডার্সের লাইসেন্স ব্যবহার করে ওই ঠিকাদারকে কাজ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ফজলে রাব্বী নিজেই প্রশিক্ষণার্থীদেও খাবার সরবারহ, উপকরণ, সেলাইমেশিন ও আর্থিক সহায়তার কাজ করে উপকরণ ও সহায়তা বিল নিজেই উত্তোলন করেছেন। একই অর্থবছরে ২৫ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য অস্থায়ী সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে সোনালী খাতুন পিয়াকে সেলাই প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্মাানী নির্ধারণ করা হয় দৈনিক ১ হাজার টাকা। ২৫ দিনে তাকে ২২ হাজার ৫’শ টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা।

এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪০ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য অস্থায়ী সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মরিয়ম ও সালমাকে। ৪০ দিন প্রশিক্ষণের জন্য তাদের দুজনের সম্মাানী নির্ধারণ করা হয় দৈনিক ৪ হাজার টাকা। এদের মধ্যে সালমা আক্তারের ২টি সেশন পরিচালনার জন্য কর্তন করে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা সম্মানী পাওয়ার কথা থাকলেও তাকে দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার টাকা এবং মরিয়ম খাতুনের ১ সেশন পরিচালনার জন্য তাকে ৭২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা। গত তিন অর্থবছরের প্রতিটি বরাদ্দ থেকে একইভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

কয়েক দফা তার বদলির আদেশ পেলেও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের আস্থাভাজন থাকায় বার বার বদলি বাতিল করে একক রাজত্ব কায়েম করেছেন ফজলে রাব্বী। যার কারণে তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি কেউ। নিজের আধিপাত্য ধরে রাখতে কোন উপ-পরিচালক যোগদান করার সুযোগ দেননি। যখনই কোন উপ-পরিচালক মেহেরপুরে আসার খবর জানতে পারতেন, তখনই সে বিভিন্ন কৌশলে উর্ধ্বতনকে ম্যানেজ করে পদায়ন বাতিল করতেন। যেন মেহেরপুর জুড়ে শুধু তারই আধিপাত্য থাকে।

অফিসের কেনাকাটা, টেন্ডারের কাজ নিজে করা ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অন্যকে কাজ পাইয়ে দেওয়া, ঠিকমত অফিস না করা, অফিসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ-বদলী করা, পছন্দের লোকদের আর্থিক সহযোগীতা, এতিমদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, সরকারি গাড়ি ব্যবহার, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে কাজী মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী বলেন, আমার উপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরণের কর্মকান্ডের সাথে আমি জড়িত নই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার উপর অভিযোগ আনা হয়েছে।

জেলা সমাজসেবার উপপরিচালক মোঃ আশাদুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো আমার যোগদানের আগের ঘটনা। অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে যদি কোন অনিয়ম থাকে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category