নিত্যপণ্যের বাজার আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও সাত দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া নতুন করে না বাড়লেও উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে সব ধরনের সবজি ও মাছ। তবে চাল ও আটা-ময়দার দাম কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেট, হাতিরপুল, আজিমপুর ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব জানা গেছে।
নিউমার্কেটের খুচরা বিক্রেতা সজিব হোসেন বলেন, গত মাসের প্রথমদিকে পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দাম বাড়ে। যে কারণে সেসময় প্রতি ডজন ডিম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এজন্য গত সপ্তাহেও প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন পাইকারি বাজারে আবারও দাম বাড়ায় ১৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে জানান বিক্রেতারা।
বহুমুখী ডিম ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের অভিযানের পর ডিমের দাম অযৌক্তিকভাবে কমে যায়। এখন দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা চলছে। কয়েকদিন আগে দাম অনেক বেড়েছিল।
খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি সিম, টম্যাটো ও গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। প্রতি কেজি বরবটি ৮০-৯০, করলা ৮০, বেগুন ৬০-৭০, পটোল ৪০-৫০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙ্গা ৪০-৫০, ঢেঁড়শ ৪০ এবং প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা।
এদিকে মাছবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুইমাছ বিক্রি হয়েছে ৩২০-৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০-২০০ টাকায়। প্রতি কেজি কইমাছ বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা। প্রতি কেজি শিংমাছ ৩৫০-৪৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৫০০ টাকা।
সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গত এক মাসের ব্যবধানে চাল, চিনি, মসুর ডাল, শুকনা মরিচ, আদা, জিরা, লবঙ্গ, এলাচ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, গুঁড়াদুধ, লবণসহ ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে।
সাবান, টুথপেস্ট, নারিকেল তেলসহ বিভিন্ন প্রসাধনীর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত। আগে আধা কেজির যে ডিটারজেন্টের দাম ছিল ৬০ টাকা, সেটি এখন ৯০ টাকা। ৫২ টাকার সাবানের দামও এখন ৭৫ টাকা হয়েছে। যদিও এসব পণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব টিসিবির কাছে থাকে না।
টিসিবি আরও বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শুকনা মরিচের দাম। গত মাসে যে মরিচের দাম ছিল ৩০০-৩৩০ টাকা, সেটা এখন ৩৫০-৪৫০ টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে খোলা আটার দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগে ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪৭-৫২ টাকায় ঠেকেছে। যদিও এ সময়ে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলো ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি হলেও কমার তালিকায় থাকা তিনটি পণ্যের (আলু, মুগডাল, মুরগি) দাম কমার হার যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ৬ দশমিক ১২ এবং ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে কমছে না।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে কোনো পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ে সেটি পরবর্তীসময়ে সেভাবে সমন্বয় হয় না। দাম কমলেও কোম্পানি বা বিক্রেতা কেউই সেটা বাজারে বাস্তবায়ন করতে চান না।