তামাকজাত দ্রব্যের উচ্চ মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি এর ব্যবহার কমানো সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য অনেক কম পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি মানুষের কাছে আরো সস্তা হয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য আগামি অর্থবছরে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
রবিবার (২৬ মে) সকাল ১১টায় “জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে তামাকজাত দ্রব্যের কর ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তামাক-কর বিশেষজ্ঞগণ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর ট্যোবাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুমে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনটিটিপির অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির টেকনিকাল কমিটির কনভেনর ড. রুমানা হক। ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং সঞ্চালনা করেন বিএনটিটিপি’র প্রজেক্ট অফিসার ইব্রাহীম খলিল।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে একটি শক্তিশালী তামাক-শুল্ক নীতি গ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এই ঘোষণা বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটার বাস্তবায়ন বিলম্বিত করতে তামাক কোম্পানি নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।
তারা আরও বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে বর্তমানে প্রচলিত অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। ত্রুটিপূর্ণ এ করারোপ পদ্ধতির কারণে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না। আবার তামাক কোম্পানি সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা রাজস্বা ফাঁকি দিচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ত্রুটিপূর্ণ তামাক কর ব্যবস্থাকে একটি গ্রহণযোগ্য নিয়মের মধ্যে আনতে ও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে অতি দ্রুত একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন করত হবে।
ওয়েবিনারে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল রকফার সুলতানা খানম; বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ; তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং উন্নয়ন সমন্বয় এর হেড অব প্রোগ্রাম শাহিনুল আলমসহ অন্যান্যরা। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধিবৃন্দ এ ওয়েবিনার অংশগ্রহণ করেন।