মেহেরপুরের গাংনীতে প্রধান শিক্ষক ও তার আত্মীয়দের গণপিটুনিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সহকারী শিক্ষক মিরাজ শরীফ। তিন শিক্ষার্থীকে প্রহার করার প্রতিবাদ করায় রাগান্বিত হয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও তার লোকজন লাঠি সোঠা ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন সহকারী শিক্ষককে।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বেলা ১১টার দিকে গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ ব্যাপারে আহত শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শিক্ষা অফিস বলছে, ঘটনাটি তদন্তে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির গনিত ক্লাসে যান প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান। ক্লাসে অংক না পারায় তিন শিক্ষার্থীকে ডাস্টার দিয়ে মাথায় আঘাত করে আহত করে। এ ঘটনায় ওই তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে সহকারী শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি জানতে চান। সহকারী শিক্ষকগণ অভিভাবকদেরকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সহকারী শিক্ষক মিরাজ শরীফ শিক্ষার্থীদেরকে প্রহারের বিষয়টির প্রতিবাদ করেন ও অভিভাবকদের আগমনের বিষয়টি জানান। এতে রাগান্বিত হয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তার আত্মীয় স্বজনদের খবর দিয়ে বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। এসময় শিক্ষক মিরাজ শরীফকে পিটিয়ে আহত করে। অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয়রা আহতকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে প্রেরণ করেন।
শিক্ষক মিরাজ শরীফ জানান, প্রধান শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখান ও অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। অনেক কষ্ট করে হোম ভিজিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসা হয়। এই নিয়ে মাঝে মধ্যে প্রধান শিক্ষক আমাদের ওপর রাগান্বিত হন এবং মারমুখি আচরন করেন। পূর্বের ঘটনার রেশ ধরেই তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। তিনি যা করবেন তার মধ্যে আমাদের সম্মান অক্ষুণ্য রেখে এবং শালীনতা বজায় রেখে করবেন। সহকারি শিক্ষক মিরাজ শরিফ আহতর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি শিক্ষক হলেও রক্তে মাংসে গড়া একটি মানুষ। আমাকে সমস্ত শিক্ষকরা মিলে বিভিন্ন সময় হেয় পতিপন্ন করার চেষ্টা করে। আমি বিদ্যলয় থেকে বদলি নিতে চেয়ে শিক্ষা অফিসে দরখাস্ত করেছি। আজকে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন শিক্ষার্থীদের মারধর করিনি । আমার বিরুদ্ধে কোন শিক্ষার্থীর অভিযোগ নেই। অভিভাবকরা যদি আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতে পারেন তবে আমি স্বেচ্ছায় বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাব।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাজাহান রেজা জানান, শিক্ষক মিরাজ শরিফের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে জেলা শিক্ষা অফিসার সমীপে প্রেরণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি তিনিই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।