আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণকারী কিশোর জুয়েলের মৃত্যুকে ঘিরে একটি কুচক্রী মহল সম্প্রতি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
আর সেই ষড়যন্ত্রের তীর তাক করা হয়েছে জুয়েলেরই তিন বন্ধু ও নাবালিকা একটি মেয়ের পরিবারের দিকে।
এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুই পাড়া ইউনিয়নের কবরবাড়িয়া গ্রামে।
জানা যায়,কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুই পাড়া ইউনিয়নের কবর বাড়িয়া গ্রামের শের আলীর ছেলে জুয়েল (১৪) গত ৪ জুন ২০২২ স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় পরিবারের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করে মৃত্যু বরণ করে।
পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে বিষাক্ত ট্যাবলেট সেবন করে মৃত্যুবরণ করে বলে জানা যায়।
তার পরিবারও তখন আত্মহত্যা করে বলে স্বীকার করে নেয়।সে সময় পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই মর্মে মন্তব্য করে লাশের ময়নাতদন্ত না করার জন্যও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যের নিকট অনুরোধ জানান।
যার স্বাক্ষী শত শত স্থানীয় এলাকাবাসী। কিন্তু সম্প্রতি এক কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় জুয়েলের পরিবার তাঁদের মত পরিবর্তন করে জুয়েলের তিন বন্ধু দিশান,আল-আমিন ও রাতুলকে হত্যাকারী বলে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে।
ওই বিবৃতিতে জুয়েলের বাবা শের আলী ও মা তাঁর (জুয়েল) হত্যার বিচারও দাবি করেন।এছাড়াও ওই এলাকার একটি নাবালিকা মেয়েকে জড়িয়ে অপবাদও দেয় এবং তাঁর পরিবারের উপর হত্যার দায় চাপানোরও কথা বলেন।
এবিষয়ে ওই নাবালিকা মেয়েটি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,আমি জুয়েল নামে কাউকে চিনতামই না।তাঁর মৃত্যুর পরে লোকমুখে শুনে জানলাম জুয়েল নামে একটি ছেলে মারা গেছে।
সম্প্রতি আমাকে নিয়ে যে অপবাদ প্রচারিত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। উক্ত ভিডিয়োটি প্রচারের ফলে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি।
আমি এই অপপ্রচার বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি এবং কুচক্রী মহলের বিচার দাবি করছি।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদার হোসেন বলেন, মাঠের মধ্যে বাইপাস সড়কের পাশে ধানক্ষেতে একটি লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমি সেখানে যায়।
গিয়ে দেখি শের আলীর ছেলে জুয়েলের লাশ।আমি জনসম্মুখে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করি এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে বলি।
শের আলী আমাকে লাশের ময়নাতদন্ত না করার জন্য ব্যাপক অনুরোধ করে।
তাঁর কথা না শুনে আমি এবং চেয়ারম্যান মিলে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করি।
কিন্তু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও ছড়িয়ে আমার এলাকার তিনটা নির্দোষ ছেলে ও নাবালিকা মেয়েকে জড়িয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে আমি তার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, ঘটনার দিন আমি উপস্থিত ছিলাম।আমি সার্বিকভাবে পুলিশকে সহায়তা করেছি।
শের আলী ও তাঁর পরিবার লাশের ময়নাতদন্ত ঠেকাতে অনেকবার অনুরোধ করেন।
কিন্তু তাঁদের কথা উপেক্ষা করে আমি,স্থানীয় সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তা মিলে লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপবাদমূলক ভিডিওটা ছড়ানো হচ্ছে সেটা বানোয়াট, মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া কবরবাড়িয়া এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসীও ওই অপবাদমূলক ভিডিও প্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র ও প্রতিবাদ জানান।
ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত মিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল জানান,আমি গিয়ে দেখি ঘটনাস্থলে জুয়েল নামের একটি কিশোরের লাশ পড়ে আছে।
লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি। তবে পিঠে ঘাসের দাগ ছিলো এবং লাশের পাশ থেকে কিছু গ্যাস ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
মৃত্যুর কারণ হিসাবে জানতে চাইলে পরিবারের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান জুয়েলের বাবা এবং তাঁর স্বজনরা।
এবিষয়ে ওই সময় মিরপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।