কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দলটির ১৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নেতাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অধিকাংশ নেতা চিঠি হাতে পেলেও শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে জবাব না দিলে একতরফাভাবে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিঠি পাওয়া বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা দুই নেতার স্বেচ্ছাচারিতা। তারা সংগঠনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছেন। এর কোনো ভিত্তি নেই। এতে প্রতিবাদ থামবে না।
শোকজ চিঠিতে বলা হয়, গত ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটির অনুমোদন ও ঘোষণা দিয়েছেন। অনুমোদিত কমিটি এবং নেতাদের বিরুদ্ধে আপনি অগঠনতান্ত্রিক, বেআইনি, উচ্ছৃঙ্খল ও হঠকারীমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে “দায়িত্বজ্ঞানহীন তথাকথিত কর্মসূচিতে” বারবার অংশ নিয়ে অসত্য, বিদ্বেষপূর্ণ, অশালীন ও হুমকিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। এটি গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ড।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহবায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাঠে ছিলেন না। কমিটি ভেঙ্গে দিতে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
শোকজ নোটিশ পাওয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী মিলন বলেন, ‘‘কমিটিতে দুর্দিনে দলের হাল ধরা অনেক নেতাকর্মীর জায়গা হয়নি। অযোগ্যদের বাদ দিয়ে দলের পাশে থেকে দলের জন্য যারা ত্যাগ শিকার করেছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে আন্দোলন করেছি।
ওই শোকজ চিঠির কোনো প্রশাসনিক গ্রহণযোগ্যতা নেই। শোকজ চিঠির ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, সদস্যসচিব ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে যে ধারা উল্লেখ করা হয়েছে সেই ধারা মোতাবেক সদস্যসচিব শোকজ চিঠি পাঠাতে পারেন না। কেউ অনিয়ম বা সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ড করলে সদস্যসচিব কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাতে পারেন। তারপর সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নেবে।
শোকজ নোটিশ পাওয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু বলেন,‘‘আমরা কোনো দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিনি। দলের গঠনতন্ত্র মেনেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘‘কারণ দর্শানোর নোটিশ আহবায়ক কমিটির এখতিয়ারভুক্ত। যারা দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে এবং জবাব দিতে বলা হয়েছে। এটা কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না। তবে, যারা নোটিশের জবাব দিবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’