কোনও মোবাইল অপারেটরের তিন দিনের ডাটা (ইন্টারনেট) প্যাকেজ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ঘোষিত নতুন নিয়মের কারণে এমনটা হয়েছে। ১৫ অক্টোবরের প্রথম প্রহর থেকেই প্যাকেজগুলো আর পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাওয়া যাচ্ছে ৭ ও ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড প্যাকেজের ইন্টারনেট। এতে করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিন দিনের প্যাকেজ না থাকায় গ্রাহককে সর্বনিম্ন ৭ দিনের প্যাকেজ কিনতে হচ্ছে। ‘গ্রাহক স্বার্থ’ বিবেচনা করে বাদ দেওয়া হয়েছে তিন দিন মেয়াদের ডাটা (ইন্টারনেট) প্যাকেজ।
যদিও এক দিনের প্যাকেজের ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে। নতুন নির্দেশনায় এক দিনের ডাটা প্যাকেজের কথা উল্লেখ ছিল না। কিন্তু চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে দর্শকদের খেলা দেখার সুযোগ করে দিতে এই প্যাকেজ চালু রয়েছে। বিশ্বকাপ শেষ হলে এই প্যাকেজও আর থাকবে না বলে জানা গেছে।
মোবাইল অপারেটরগুলোর ওয়েবসাইট ও অ্যাপস থেকে জানা গেছে, গ্রামীণফোন দিচ্ছে ২৪ ঘণ্টা বা এক দিনের বিশ্বকাপ অফার ২৮ টাকায়। একই অফারে এক জিবি দিচ্ছে ৯৭ টাকায়। আর আড়াই জিবি ইন্টারনেটের ৭ দিনের প্যাকেজ দিচ্ছে ৯৮ টাকায়। রবির ৭ দিনের এক জিবি ডাটার দাম বর্তমানে ৬৮ টাকা, আড়াই জিবির দাম ৯৮ টাকা, ৫ জিবির দাম ১৪৮ টাকা। বাংলালিংকের ৭ দিনের এক জিবি ডাটা প্যাকেজের দাম ৬৯ টাকা, তিন জিবির দাম ৮৯ টাকা। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাংলালিংকেরও রয়েছে এক দিনের এক জিবি ডাটা প্যাকেজ,দাম ২০ টাকা।
তবে প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিডেট ডাটা প্যাকেজ অফার করছে— ২৫, ৫০ ও ৭৫ জিবি করে। গ্রামীণফোনের আনলিমিটেড প্যাকেজের মেয়াদ ২০৩৩ সাল পর্যন্ত, আর রবির ৪ হাজার ১৫ দিন, বা ১১ বছর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটবের মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে তিন দিনের এক জিবি ডাটা প্যাকেজ কিনতে গ্রাহকের খরচ হতে ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মতো। এখন একই পরিমাণ ডাটা ৭ দিনের মেয়াদে কিনতে গ্রাহকদের বেশি খরচ করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বিটিআরসি বলছে, গ্রাহক অসন্তোষ দূর করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা পাবে। তিন দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে বিটিআরসির ব্যাখ্যা হলো— যদিও বেশির ভাগ (৬৯ দশমিক ২৩) গ্রাহক তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করে। কিন্তু দেখা গেছে, প্যাকেজকেন্দ্রিক প্রতারণা, স্বল্প সময়ের মধ্যে অল্প খরচে বেশি পরিমাণ ডাটা অফারের মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে। পরবর্তী সময়ে গ্রাহক তিন দিনের মধ্য ওই পরিমাণ ডাটা ব্যবহার করতে পারে না। ফলে তার নিজের পয়সায় কেনা অব্যবহৃত ডাটা হারিয়ে ফেলে। এতে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।
কী আছে নির্দেশনায়
বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। ইন্টারনেটের প্যাকেজ সংখ্যা হবে ৪০টি, যা আগে ছিল ৮৫টি। এ ছাড়া প্যাকেজের সময়সীমা হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড। প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিডেট ডাটা প্যাকেজ অফার করবে— ২৫, ৫০ ও ৭৫ জিবি করে।
এ ছাড়া মোবাইল অপারেটরগুলোর নিজস্ব অ্যাপের (মাইজিপি, রবির মাই রবি ও মাইবিএল) অ্যাপের মাধ্যমে ফ্লেক্সিবল প্ল্যান প্যাকেজ ডিজাইন— তথা গ্রাহক নিজের চাহিদা বা প্রয়োজন মতো প্যাকেজ ডিজাইন করা যাবে, যা মূল প্যাকেজ সংখ্যায় (৮৫টিতে) অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বোনাসসহ অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে, যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কেনা হয়।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের আশঙ্কা ছিল এই প্যাকেজ এবং গ্রাহকের চাহিদার কথা বা পছন্দের বিষয়টি উপেক্ষা করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, এর মাধ্যমে গ্রাহকের খরচ কমবে না, বরং বৃদ্ধি পাবে। আজ আমরা লক্ষ্য করলাম, গ্রামীণফোনের এক জিবি ইন্টারনেট ৭ দিন মেয়াদি প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৬৯ টাকা, রবি ৬৮ টাকা বাংলালিংকের প্রায় সমপরিমাণ। অথচ পূর্বে ৩ জিবি ৭ দিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম ছিল ১৪৯ টাকা।
তিনি বিবৃতিতে আরও বলেন, ৭ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজে গ্রাহকের সুবিধা বেশি হবে, প্রতারণা কমবে এবং খরচ কমবে। কিন্তু হয়ে গেলো এর উল্টো। সুবিধার কথা বলে গ্রাহকের খরচ বৃদ্ধি করা হলো।