• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি ও খাদ্যের নিশ্চয়তার দাবিতে পবা’র মানববন্ধন

বিবর্তন প্রতিবেদক
Update : শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪
বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি ও খাদ্যের নিশ্চয়তার দাবিতে পবা’র মানববন্ধন
বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি ও খাদ্যের নিশ্চয়তার দাবিতে পবা’র মানববন্ধন

বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি ও খাদ্য নিশ্চিত করার দাবীতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ মানববন্থন করেছে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন। মানববন্ধন থেকে কার্যকর বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি ও খাদ্য নিশ্চত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণণের দাবী জানিয়েছে তারা। আজ শনিবার(৯ মার্চ) সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা), গ্রিন ফোর্স, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বারসিক ও ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
কর্মসূচির শুরুতে এই আয়োজনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সঞ্চালক বলেন, পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। প্রতিবছরই আমরা দেখতে পাই রমজানে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী ভাজা হয়। এছাড়াও একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক রং ও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ভোজ্য তেল তৈরী করা হয়। বিষাক্ত রং ব্যবহার করে সাদা ডিম লাল করা হয় । চা-বাসীসহ বিভিন্নভাবে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য পণ্য বিক্রি হয়। বিশেষ করে পবিত্র রমজানমাসে এর ব্যপকতা বেড়ে যায়। এতে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টিসহ গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি ও খাদ্য নিশ্চিত করার দাবীতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করো হয়েছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপত্বিতে এবং পবা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র কার্যকরী সভাপতি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, নাসফের সাধারণ সম্পাদক ও পবা’র সম্পাদক জনাব মো. তৈয়ব আলী, পবার সম্পাদক ও বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌ. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী শেখ আনসার আলী, স্পেস এর প্রধান নির্বাহী শিমুল খান। ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন এর মুখপাত্র মো: ইমরান হোসেন, আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তহারা লীগ এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাওলাদার, মানবাধিকারকর্মী জাকিয়া শিশির, পবা’র সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব ফয়েজ উল্লাহ।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর রাজধানীসহ সারা দেশে প্রচুর ইফতারজাতীয় খাবার বিক্রি হয়। এই সুযোগেই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ইফতারিতে ভেজাল মেশায়। খাদ্যে ভেজাল এমন একটি নীরব ঘাতক। এতে দেশের অধিকাংশ মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইফতারিসহ সকল খাদ্য বিষ ও ভেজালমুক্ত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
আবু নাসের খান বলেন, বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতী গঠনে অপরিহার্য। আমাদের দেশের কিছু বিবেকহীন ব্যবসায়ী ও আড়তদার বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন করে ফেলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের তদারকি আরো বাড়াতে হবে, সব বাজার গুলোতে। শুধু ছোটো দোকানদারদের উপর শুধু চাপ সৃষ্টি করে হবেনা,কারখানা গুলোতে তদারকি বাড়াতে হবে। মানুষের খাদ্যে ভেজাল অমানবিক ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও গণমানুষকে সচেতন করার মাধ্যমেই ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
পবা’র সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী বলেন, রমজান আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় খাবারে ভেজাল মেশান। ইফতারিতে সব থেকে বেশি চাহিদা মুড়ির। সেই মুড়িকে সাদা করতে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড এবং বড় বড় দানায় পরিণত করতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার পেতে আধুনিক কীটনাশক মুক্ত চাশাবাদ ব্যবস্থা পড়ে তোলা প্রয়োজন।
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন- অনিরাপদ খাদ্য বা ভেজাল খাদ্যে সংক্রান্ত আইন গুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য ভেজাল মিশিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আরো বলেন, নিরাপদ ইফতারের জন্য প্রথম এবং প্রধান হলো পানযোগ্য পানি। কিন্ত বাজারে যার দাম অনেক বেশি। এই রমজানে পানযোগ্য সুপেয় পানি পাবলিক প্লেসগুলোতে সহনীয় মূল্যে পরিবেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের বিকল্প কিছু নেই। আমরা খাদ্যের সাথে বিষও খাচ্ছি রোজ।
নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী শেখ আনসার আলী বলেন, রমজান মাসে রোজাদারেরা তাজা শাকসবজি, মৌসুমি ফলমূল, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির পরিপূর্ণ নির্ভেজাল স্বাদ গ্রহণ করতে চান। কিন্তু বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি খাদ্য ও পণ্যদ্রব্যই ভেজালমিশ্রিত। খাবারে ভেজাল মেশানো আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন,ভেজাল খাবার জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ভেজাল খাবার গ্রহণ করে মানুষ যেসব মারাত্মক অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে তার চিকিৎসা ব্যয় অত্যধিক এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা লাগে বা আজীবন চিকিৎসা করতে হয়। এতে জনগণের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় অনাকাঙ্খিত চিকিৎসা ব্যয়ে।
মানববন্ধনে আয়োজক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দসহ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য অধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পবার পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধলে মানববন্ধনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সুপারিশসমূহ:
১. খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদান অব্যাহত রাখা।
২.ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
৩. জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজালরোধে কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
৫. সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা।
৭. গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে কৃষক, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কীটনাশক, ভেজাল মিশ্রনের ক্ষতিকর দিক এবং আইনে বর্ণিত দন্ড তুলে ধরে সচেতন করা।
৮. পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক বন্দরসমূহে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা।
৯.খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
১০. বিষযুক্ত খাদ্যের ভয়াবহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category