রাতে ফোন করে মেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার কাছে এ কথা বলে।
পরে জামাই ফোন কেড়ে নিয়ে বলে কোথায় পাবেন জানি না ২০ হাজার টাকা দেন।
না হলে মেয়েকে মারতে মারতে মেরে ফেলবো।
এ কথা জানান কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাতলামারী এলাকার দিনমজুর মনিরুল ইসলাম।
রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদাআজমপুর গেলে মেয়ে মনিরা খাতুন মিমের মরদেহ পান তিনি।
নিহত মনিরা খাতুন মিম (২৩) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাতলামারী এলাকার দিনমজুর মনিরুল ইসলামের মেয়ে।
এবং একই ইউনিয়নের নওদা আজমপুর এলাকার সজিব মোল্লা অনিকের স্ত্রী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যৌতুকের টাকার জন্য কিছুদিন পর পরই মিমকে মারধর করতো তার স্বামী সজিব। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো।
গত ২ দিন ধরে মিমকে খেতে পর্যন্ত দেয়নি অনিকের মা রাজেনা খাতুন (৪০)। শনিবার বিকেলে মিমকে মারধর করে তারা। পরে স্থানীয়রা তাদের বাধা দেয়।
পরে রাতে আবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পায় প্রতিবেশীরা। পরে সকালে সবাই জানতে পারে রাতে গলাই দড়ি দিয়ে মারা গেছে মিম।
নিহত মিমের বাবা মনিরুল ইসলাম জানান, শনিবার (১৩ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ফোন করে মিম। বলে ‘বাবা এরা আমাকে মেরে ফেলবে।
আমাকে এসে নিয়ে যাও, আমাকে বাঁচাও। তাৎক্ষণিক জামাই অনিক ফোন নিয়ে বলে, আমার ২০ হাজার টাকা দরকার। কোথায় পাবেন তা জানি না। তবে আমাকে টাকা দেন না হলে আপনার মেয়েকে মারতে মারতে মেরে ফেলবো।
তখন আমি তাকে বলি, আমি গরিব মানুষ টাকা কোথায় পাবো। মেয়েকে মেরে ফেললেও এখন টাকা দিতে পারবো না।
তিনি আরও জানান, পরিবারের অমতে ৫ বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে করে মিম ও অনিক।
পরে জামাই এর জন্য ১ লাখ টাকা নগদ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর টাকা চাইলে আরও ৮০ হাজার টাকার মতো দেওয়া হয়।
কিন্তু মেয়ের সুখ আসে না। এর আগেও টাকার জন্য মারধর করে অনিক। মাঝে মাঝে এমন মারধর করলে আমি এসে মেয়েকে একাধিকবার আমার বাড়িতে নিয়েও গেছি।
গতকাল এসে যদি মেয়েকে নিয়ে যেতাম তাহলে আজ হয়তো তার লাশ দেখতে হতো না। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যাতে আর কোনো বাবার বুক এভাবে খালি না হয়।
নিহত মিম ও অনিকের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে এবং আট মাসের আরেকটি মেয়ে রয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে মনিরার স্বামী অনিক (২৮), তার বাবা শরিফ মোল্লা (৪৭) ও সজিবের মা রাজেনা খাতুন (৪২) পলাতক রয়েছে।
আমলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে নিহত মিমের স্বামী-শ্বশুর ও শাশুড়ি পলাতক রয়েছে।