• শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন

গাংনীতে গ্রাম্য সালিশে পুলিশের উপস্থিতিতে লাখ টাকা জরিমানা

বিবর্তন প্রতিবেদক:
Update : মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
গাংনীতে গ্রাম্য সালিশে পুলিশের উপস্থিতিতে লাখ টাকা জরিমানা
গাংনীতে গ্রাম্য সালিশে পুলিশের উপস্থিতিতে লাখ টাকা জরিমানা

মেহেরপুরের গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামে জুবায়ের হোসেন (৪০) নামের একজনকে বেদম মারপিট করে বসানো হয়েছিলো সালিশ। মাতব্বরদের বিচারে পুলিশের উপস্থিতিতেই এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই সাথে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে। জুবায়ের ষোলটাকা গ্রামের আয়ুব হোসেনের ছেলে।
সালিশকারীদের অভিযোগ, জুবায়ের হোসেন সন্ধ্যার পর থেকে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন জনের ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে নানা গোপন কর্মকান্ড দেখে বেড়ায়। তবে তার বিরুদ্ধে কোন চুরির অভিযোগ নেই।
জানা গেছে, সোমবার রাতে জুবায়ের হোসেন স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে পেছনে অবস্থান নেয় এবং জানালা দিয়ে উঁকি মারে। এসময় লোকজন তাকে ধরে ফেলে। গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আলাল, আচেল উদ্দীনের ছেলে রবিউল ও মোজাফের ছেলে আজাম্মেল ওই জুবায়ের হোসেনকে বেধড়ক মারপিট করে। এতে জুবায়ের হোসেনের দুই পা হাত ও পিঠে জখম হয়। পরে তারা জুবায়েরকে প্রাইমারী স্কুলের একটি কক্ষে আটক রাখে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সালিশ বৈঠকের ডাক দেয়া হয়। সালিশে জুবায়েরকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৩০০ টাকা মুল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেয়া হয়। সেই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জরিমানার টাকা গ্রামের সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হবে বলে জানান সমাজপতিরা। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বানিয়াপুকুর গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আব্বাস, ইউপি মেম্বর তোজাম্মেল, শরিয়ত এবং ষোলটাকা গ্রামের সাবেক মেম্বর ময়নাল হক, বর্তমান মেম্বর মহিবুল হকসহ এলাকার লোকজন। একই সময়ে উপস্থিত ছিলেন হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই ওবির ও সঙ্গীয় ফোর্স।
ইউপি মেম্বর তোজাম্মেল জানান, বেশ কিছুদিন যাবত জুবায়ের বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে বা বাড়ির পেছনে গিয়ে ঘরে উঁকি ঝুঁকি মারে। অনেকেই চোর বলে তাড়া করে। গত সোমবার রাতে তাকে হাতে নাতে ধরে স্থানীয় লোকজন। জনগনের মতামতের ভিত্তিতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ টাকা সামাজিক কাজে ব্যয় করা হবে। গ্রাম্য সালিশিতে একলাখ টাকা জরিমানা করতে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
সাবেক ইউপি সদস্য ময়নাল হক জানান, তিনিসহ ষোলটাকা গ্রামের লোকজন জুবায়েরকে নিতে এসেছিলাম কিন্তু বানিয়াপুকুর গ্রামের সমাজপতিরা জুবায়েরকে না দিয়ে জরিমানা করেছে এবং মুচলেকা লিখে নেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকার পরও কিভাবে সালিশের নামে প্রহসন করে তা বোধগম্য নয়। সমাজপতিরা যে মোটা টাকা জরিমানা করেছে তা সম্পুর্ণ অবৈধ।
হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই ওবির জানান, তিনি খবর পেয়ে এসেছেন এবং লোকজনের বাঁধার মুখে জুবায়েরকে থানায় নিতে পারেন নি। গ্রাম্য সালিশিতে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে তাই কিছুই করার নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন জানান, এমন অপরাধে এভাবে মারধর করা হবে সেটা কেউ ভাবেনি। লোকটির আর্তচিৎকারে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন কিন্তু আলাল, রবিউল ও আজাম্মেল কারো কথা শোনেনি। তাকে মারধর করে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে। যেটা খুবই অন্যায়। তাকে পুলিশে না দিয়ে সালিশের ব্যবস্থা করায় অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মারধর করার পর আবার তার কাছ থেকে মোটা অংকের জরিমানা নেয়াটা কোন মতেই সঠিক হয়নি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন তবে মোটা অংকের টাকা জরিমানা ও মুচলেকা লিখে নেয়ার বিষয়টি সম্পুর্ণ অজানা। ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category