মেহেরপুরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগিদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরীতে দেখা দিয়েছে কচ্ছপ গতি।
খাদ্য অফিস বলছে, ডাটাবেজ তৈরীর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে তাগাদ দেয়া হয়েছে। তবে অনেক চেয়ারম্যান ও মেম্বরগণ সহযোগিতা করছেন না।
আর চেয়ারম্যানরা বলছেন, সার্ভার ত্রুটির কারণে সময় মতো তালিকা প্রনয়ন শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এতে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সরকারী উদ্যোগ থেকে উপকারভোগিরা বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে দরীদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে খাদ্য সহায়তা দিতে ১০ টাকা দরে চাল বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিবছর মার্চ এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে এ কর্মসূচি।
জেলার তিনটি উপজেলায় রয়েছেন মোট সাত হাজার ৪৬৬ জন উপকারভোগি। বর্তমানে ১০ টাকার স্থলে চালের দর ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। প্রতিটি কার্ডধারী পাবেন ৩০ কেজি চাল।
বিগত দিনে অস্বচ্ছল পরিবারকে এ সুবিধা দেয়া ছাড়াও অনেকে মৃতুবরণ করেছেন। আবার অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এসব অনিয়ম দূরীকরণে ডাটাবেজ তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চলতি মাসে ডাটাবেজ তৈরী সম্পন্ন করা না গেলে অনেকেই এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সুত্রে জানা গেছে, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে দূর্ণীতি অনিয়ম রোধ করতে ডাটাবেজ আপডেট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ি বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে অবহিত করা হয়।
তালিকা প্রস্তুত করে তা সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিলে তা অনুমোদন করা হবে। সেক্ষেত্রে উপকারভোগির ছবি ও তথ্য সংযোজন করতে হবে। তবে এখনও ইউপি চেয়ারম্যানগণ ওই তালিকা সম্পন্ন করতে পারেন নি। এ পর্যন্ত ৬১% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যদি সঠিক সময়ে তালিকা না দিতে পারেন তাহলে ৩৯% উপকার ভোগি এ সুবিধা পাবেন না। এদিকে কাজে অগ্রগতি না হবার পেছনে জনগনের অসচেতনতা ও সার্ভার ত্রুটির কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যানগণ।
গাংনীর ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পাশা জানান, সার্ভার ত্রুটির কারণে আপডেট করা যাচ্ছে না। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। আবার বিগত চেয়ারম্যান অনেক অস্বচ্ছল পরিবারকে বাদ দিয়ে স্বচ্ছলদের নাম দেয়ায় সেগুলো যাচাই বাছাই করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ জানান, জনগনকে এ কর্মসূচির আওতাও আনতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বর মাইকিং ছাড়াও নোটিশ বোর্ডে প্রজ্ঞাপণ টাঙানো হয়েছে। তারপরও অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। তারা কেউ সহযোগিতা করছে না। তাছাড়া সার্ভার ত্রুটি রয়েছে মারাত্মকভাবে। ফলে কাজ এগিয়ে নিতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোয়ার হোসেন জানান, ডাটাবেজ আপডেটের বিষয়ে চেয়ারম্যানদেরকে চিঠি দেয়ার পর ব্রিফিং করা হয়েছে। সেসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে দিক নির্দেনা প্রদান করেন। কিন্তু কয়েকজন নতুন চেয়ারম্যান বেশ অনীহা প্রকাশ করছেন।
বিশেষ করে তারা পুর্বের চেয়ারম্যানদের তালিকা থেকে কিছু লোকের নাম বাদ দিয়ে নিজের অনুগতদের নাম অন্তর্ভূক্তি করার কাজে ধীর গতি এসেছে। তাছাড়া সার্ভার ত্রুটিতো রয়েছেই। জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই করতে গেলে নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নতুন চেয়ারম্যানগণ তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান জানান, জেলার তিনটি উপজেলা ১৮টি ইউনিয়নে রয়েছে সাত হাজার ৪৬৬জন সুবিধা ভোগি। চলতি মাসে ডাটাবেজ তৈরীর করার জন্য চেয়ারম্যানগনকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চিঠি প্রদান করেন ও দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু সার্ভার ত্রুটির কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, সার্ভার ত্রুটির কারণে সমস্যা হচ্ছে। যেসব ইউপি চেয়ারম্যান ডাটাবেজ আপডেট করতে পারবেন না তাদের বিষয়ে সময় বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হবে। যেহেতু এটি এখন সার্ভারের কারণে হচ্ছে সেহেতু চেয়ারম্যানদের সুযোগ দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথেও আলোচনা করা হবে।