• শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ার খোকসায় খেয়াঘাট বন্ধ, জনর্দুভোগে চরমে

ইসমাইল হোসেন,কুষ্টিয়া
Update : বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

কুষ্টিয়ার খোকসায় দুগ্রুপের রেষারেষিতে বামন পাড়া খেয়াঘাট বন্ধ থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

প্রায় ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত খেয়া পারাপারের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি প্রশাসন।

জেলা পরিষদের ইজারা দেওয়া বামনপাড়া খেয়াঘাট। ইজারাদারের নামে মামলা থাকায় ভোগান্তিতে সাধারণ জনগন।

জানাগেছে, এ বিষয় নিয়ে খোকসা থানার বেতবাড়িয়া ইউপি সদস্য ফারুকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান ইজারাদার সাবেক ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদট বামন পাড়া খেয়াঘাটে পারাপার বন্ধ। বাঁশের চরাট ডুবে আছে। ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নদী পার হয়ে বিভিন্ন কাজ কর্মে অংশ নিতো কোলাহল পূর্ণ সেই ঘাটটিতে বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা।

এসময় স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মনিরুল ইসলাম বামন পাড়া খেয়াঘাট ইজারা পেয়ে ১ জুলাই থেকে বুঝে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন।

মনিরুল খেয়া ঘাট বুঝে নেবার পর থেকেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিন রাতেই কোন না কোন ঘটনা ঘটছে। রাতে নৌকার তলা ফুটো করে নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে দুবার এবং মনিরুলকে মারপিট করা হয়েছে।

তারা আরো জানান পূর্বে ফারুখ মেম্বাররা খেয়াঘাট ইজারা পেয়ে ১ বছর চালানোর সময় কোন সমস্যা হয়নি। তারা জানান, বামন পাড়া খেয়াঘাট, ঝিনাইদহ, শৈলকূপা, লাঙ্গলবাদ, কাতলাগাড়ি যাওয়ার সহজ পথ। এই ঘাট পার হয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ সহজে তাদের গন্তব্যে পৌঁছায়।

প্রতিদিন বেতবাড়িয়া ইউনিয়নে শৈলকুপা থানার অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ইয়াকুব আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চাঁদট এমবি মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসায় আসেন এই খেয়াঘাট দিয়ে।

খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা ৫/৭ কিলোমিটার ঘুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসলেও শিক্ষার্থীরা আসতে পারছেনা। পাশাপাশি খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী শৈলকূপা থানার কাতলাগাড়ি ডিগ্রি কলেজ ও কাতলাগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা।

এছাড়াও ব্যবসায়ীরা পরেছেন প্রচন্ড বিপাকে। ৫/৭ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্য পৌঁছোতে তাদের যাতায়াতের ব্যয় বেড়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারছেনা পণ্য।

এ বিষয়ে চাঁদট এমবি মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. শহিদুজ্জামান জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৈলকুপা থানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বামন পাড়া খেয়াঘাট পার হয়ে আসেন।

খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা ৫/৭ কিলোমিটার ঘুরে আসলেও ৭০/৭৫ জন শিক্ষার্থী আসতে পারছেনা। এতে তাদের পড়ালেখা ব্যহত হচ্ছে।

খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল ইসলাম বলেন, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক পারাপার হয়। ফারুখ মেম্বাররা ঘাট চালাতো। এ বছর মনিরুল মেম্বার ঘাট ইজারা পাবার পর রাতের আঁধারে পূর্বের ইজারাদারদের একজন এলাহী নৌকার তলা ছিদ্র করে ডুবিয়ে দেবার সময় ধরা পরে।

এ বিষয় নিয়ে খোকসা থানায় মামলা হয়েছে। মনিরুল মেম্বার কেন ঘাট চালাতে পারছেনা, বারবার লাঞ্ছিত হচ্ছে, নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে সেটা তো বোঝায় যাচ্ছে কি কারণে এসব ঘটনা ঘটছে।

ভুক্তভোগী ইজারাদার সাবেক বেতবাড়িয়া ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, বামনপাড়া খেয়া ঘাট ১ জুলাই থেকে বুঝে নেবার পর থেকেই পূর্বের ইজারাদার ফারুক নানা ভাবে তাকে হয়রানি করছে। রাতে নৌকা ভাংচুর করার সময় ফারুক ও এলাহি নামের দুজনকে তারা আটক করে থানায় নিয়ে যান।

পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় থানা পুলিশ। এবং থানা থেকে ফিরে এসেই নৌকা ভাংচুর ও তাকে মারধর করে ফারুখ ও তার দলবল। এ বিষয়ে খোকসা থানায় মামলা হয়েছে।

খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বেতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার জানান, জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন ইজারাদার মনিরুল দায়িত্ব বুঝে নেয়। নতুন ইজারাদারের পার্টনারদের ভিতর গন্ডগোলের কারনে ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। মনিরুল মেম্বারের মারধরের ঘটনার সাথে খেয়া ঘাটের কোন সম্পর্ক নাই।

তিনি আরো জানান, খেয়া পারাপার চালু করার জন্য ইতিমধ্যে জেলা পরিষদ ও ইউএনও বরাবর দরখাস্ত দেয়া হয়েছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস জানান, খেয়া ঘাট জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করে। বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত বসবো জনভোগান্তি নিরসনের জন্য । দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা যারা আছেন তাদের মাধ্যমে বসে দ্রুত সমাধান করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category