কাঠ লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে মেহেরপুরের গাংনীর ফল চাষিরা। মুখ রোচক, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু কাঠ লিচু বা আঁশ ফল।
বাজারে তুলনামুলক দামও বেশী। কৃষি বিভাগের সঠিক ও সুনিদৃষ্ট পরামর্শ পেলে আঁশ ফল বা কাঠ লিচুর বাগান সম্প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। কেউ আগ্রহী হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, আশফল বা কাঠ লিচু গাছ বেশ লম্বা হয়। গাছের লাগানোর ছয় মস পরেই এর ফল ফুল আসে। লিচুর মতই গাছ থেকে এ ফল সংগ্রহ করতে হয়। একটি গাছ থেকে প্রতি বছর দুই থেকে তিন মন ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিকেজি লিচু বাগানেই পাইকারি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পুষ্ট হয়ে পাঁকলে এটি খয়েরী রং ধারণ করে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এর মৌসুম। বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে গাংনীর সাহারবাটি গ্রামে ৫ বিঘা জমিতে এ লিচুর চাষ হচ্ছে।
সাহারবাটি গ্রামের আশরাফ মোল্লাহ জানান, ফরিদপুরে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে তার ফলের বাগান দেখে আকৃষ্ট হন। সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করে দেড় বিঘা জমিতে বাগান করেছেন। বাগান করতে খরচও কম। ইতোমধ্যে দেড় বিঘা জমিতে তিনি অন্তত ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। সাধারণ লিচুর মতই স্থানীয় ভাবে বাজারজাত করতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে বলে জানান এই বাগান মালিক। তার বাগান দেখে পাশর্^বর্তী এলাকা থেকেও পরামর্শ ও চারা নেওয়ার জন্য আসছেন আগ্রহীরা।
রাইপুর গ্রামের আল আমিন জানান, আঁশ ফল বা কাঠ লিচুর উৎপাদন এবং বাজারে এর চাহিদা দেখে এ ফল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেই সাথে চারা সংগ্রহ ও পরিচর্যা বিষয়ে ধারণা নিতে এসেছেন। প্রথমে এক বিঘা জমিতে আবাদ করবেন এবং সাফলতা পেলে আরো কয়েক বিঘা জমিতে বাগান করবেন বলে জানান তিনি।
একই কথা জানালেন আগ্রহী কৃষক সাহারবাটি গ্রামের কৃষক পিয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, আঁশ ফল বা কাঠলিচু বড়দের চেয়ে শিশু কিশোরদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। পরিপক্কতার সময় বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। এবছরেই চারা সংগহ করে এক বিঘা জমিতে কাঠ লিচুর বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
পুষ্টিবীদ জান্নাতুন নেছা জানান, কাঠ লিচু বা আঁশ ফলে পযাপ্ত প্রোটিন ও চর্বি রয়েছে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক। কাঠ লিচুর ফল,পাতা,ও ডগা বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে খুবই উপকারি। এ ফলের আঁশেও রয়েছে খনিজ ও ক্যালসিয়াম। সব বয়সের মানুষের শরীরে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি পুরুণ করে। মানব দেহে দুর্বলতা হলে কাঠ লিচু খেলে স্বল্প সময়ের মধ্যে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠৈ। ডাইরিয়া রোগীদের জন্য কাঠ লিচু খুবই উপকারি।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, কাঠ লিচুর আর একটি নাম আঁশ ফল। অঞ্চল ভেদে পৃথক নামে পরিচিত কাঠ লিচু বা আশঁফল। এটি দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার ফল এই কাঠ লিচু। এ উপজেলায় তেমন কাঠ লিচুর বাগান নেই তবে এরই মধ্যে আশরাফ মোল্লাহসহ কয়েকজন বাগান করেছেন। কাঠ লিটুর বাগানে কৃষকরা লাভবান হবে। এক্ষেত্রে বাগন করতে আগ্রহীদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদানেরও আশ্বাস দেন তিনি।