ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। বেশ কিছু নলকূপে অনেকক্ষণ চাপ দেওয়ার পর সামান্য পানি ওঠে। সিংহভাগ নলকুপে পানি না পাওয়ায় অনেক দূরে গিয়ে পানি নিতে ভীড় করছেন সকলে। সেচপাম্পে পানি না উঠায় সেচ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। মাছ চাষি ও গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারীরা। আবার অনাবৃষ্টি, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া পানির স্তরকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। এমনটি দেখাগেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের অন্ততঃ ১০ গ্রামের চার হাজার নলকুপে পানি উঠছে না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস বলছে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকুপের ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গেছে, গাংনীর ষোলটাকা ইউনিয়ন মাথাভাঙ্গা নদীর অববাহিকায়। ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়নের ১০ টি গ্রামে রয়েছে চার হাজার নলকুপ। হস্ত চালিত এ নলকুপে শীত ও বর্ষাকালে পানির সংকট না থাকলেও গ্রীষ্মকালে তা প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষ করে ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে পানির স্তর একেবারই নিচে নেমে যায়। এতে করে ৯০ভাগ নলকুপে পানি উঠে না। যাদের নলকুপ একটু গভীর সেখানে পানি নিতে ভীড় জমায় সকলে। গ্রামের এ পাড়া থেকে ওপাড়ায় ছুটতে হয় পানি আনার জন্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ অঞ্চলে বৈশাখ মাসেও পানির কোনো দেখা নেই। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে মাটি চৌচির হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টি আর তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন মানুষ ও পশু-পাখি। এখানে ৭৫ ফুট থেকে ১০০ ফুট গভীরে পাইপ দিলেও ভাল পানি ওঠে। কোথাও কোথাও ১৫০/২০০ ফুট পাইপ দেওয়া হয়। আর সেচের জন্যও একই পরিমাপের পাইপ লাগে। বছরের ৭/৮ মাস পানি পাওয়া গেলেও বাকি সময় পানির কষ্ট করতে হয়। গেল দু’বছর কিছুটা কষ্ট হলেও এবার কষ্টের শেষ নেই। খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি ও সেচ কাজ বিঘিœত হচ্ছে। সেচের পানির জন্য গভীর রাত পর্যন্ত চাষিদের অপেক্ষা করতে হয়। দিনে পাম্পে পানি ওঠে না এবং অনেক সময় বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের মটর পুড়ে যায়। টিউবওয়েলগুলোতে দশ চাপে এক গ্লাস পানি ওঠে না।
উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামের গরুর খামারী আশাদুল জানান, গেল দুই বছর ধরে গরমকালে প্রচন্ড রোদ ও তাপদাহের কারণে নলকূপে পানি ওঠে না। গত এক বছরে বাড়ির দুটি নলকুপে পানি না পাওয়ায় নতুন করে নলকুপ বসানো হয়েছে। এটাতেও ঠিকমত পানি ওঠে না। খাবার পানিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। তিনি আরো জানান, অনাবৃষ্টিতে আম ও লিচু গাছের গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।
জুগিরগোফা গ্রামের মাছ চাষি পল্লী চিকিৎসক আবু বক্কর জানান, তার পাঁচটি পুকুর রয়েছে। পুকুরে পানি দেওয়ার জন্য তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটিতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। একটি দিয়ে পানি দিয়ে কোনরকম মাছ টিকিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব হবে না। একই কথা জানালেন মাছ চাষি আসাদুল হক ও ইনামুল হক। এবার মাষ চাষে লোকসান হবে।
মানিকদিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়ির নলকুপে পানি না থাকায় প্রতিবেশি বীরমুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে পানি নিতে হচ্ছে। প্রচন্ড রোদের মধ্যে মানুষ ও গবাদি পশুর জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন তাই দুই তিনবার পানি নিতে আসতে হয়। তাদের মতো ১০/১২টি পরিবার এ নলকুপ থেকে পানি নেয়। ফলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পানি নিতে হচ্ছে। ভবিষ্যতের বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট নিরসনের জন্য এখন থেকে পরিকল্পিতভাবে গভীর নলকূপ বসানোর দাবী জানান তারা।
ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পাশা জানান, বেশ কয়েক বছর এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিষদের ফান্ডে এমন কোন অর্থ নেই যা দিয়ে গভীর নলকুপ বসিয়ে পানির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বিষয়টি বিবেচনায় এনে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসকে গভীর নলকুপ বসানোর আহবান জানান তিনি।
গাংনী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এলাকাবাসির খাবার পানিসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৫টি সাব-মার্সেবল পানির পাম্প এসেছে সেগুলো বসাতে একমাস সময় লাগবে। তখন আর পানির সংকট থাকবে না। তবে সেচ কাজের কোন সমাধান দিতে পারেন নি এই কর্মকর্তা।