চলছে বর্ষাকাল নেই ঝমঝম বৃষ্টি। মাঝে মাঝে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেলেও মিলছে না বৃষ্টির দেখা। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত খালবিলে পানি জমতে শুরু করেনি। পাট পরিপক্ষ হয়েছে। পানির অভাবে নিরুপায় হয়ে কিছু সংখ্যক কৃষক ডোবা-নালা ও পাটের কিছু জমিতে গর্ত করে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে শুরু করেছে। বাড়তি খরচ হওয়ায় লাভের তুলনায় ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন পাট। দামও বেশ ভালো। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পাটচাষীদের কপালে পড়তে শুরু করেছে চিন্তার ভাঁজ। তবে কৃষি অফিস বলছে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে সমস্যা কেটে যাবে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, কুষ্টিয়া জেলায় চলতি মৌসুমে ৬ উপজেলায় ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চাষ হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় চার হাজার হেক্টর কম।
এদিকে আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ শুরু হয়েছে। এখন পাট কাটা ও জাগ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। তবে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তিত কৃষকরা। পানির অভাবে পাট পচানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া না গেলে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এবার চাষের শুরুতে চাষীদের বৈরি আবহাওয়া মোকাবিলা ও বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট বীজ বুনতে হয়েছে। প্রচন্ড তাপ ও খরার সময়ে আবারো সেচ দেওয়ায় খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেড়েছে। এ জেলায় বিজে আর আই তোষাপাট-৮ ও গুটি জেআরও- ৫২৪ পাটের চাষ করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দিতে চরম অসুবিধা হচ্ছে চাষীদের। বর্তমানে পাট কাটা শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি ফলে খালবিলে পানি না জমায় পাট জাগ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে পাটচাষীরা।
জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামের পাটচাষী আলাউদ্দিন জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। পাটের ফলন ভালো হবে বলেও আশা করছেন তিনি। কিন্তু পানির অভাবে এখন পর্যন্ত পাট জাগে দিতে পারেননি। তিনিসহ আশেপাশের আরো কয়েকজন চাষী পাট কেটে বাড়ির পাশে গাঁদা দিয়ে রেখেছেন। একই কথা জানান দৌলতপুর উপজেলার দৌলতখালী গ্রামের পাটচাষী সিরাজুল ইসলাম এর।
কুমারখালী কৃষি সম্প্রসারণ বলেন, এ উপজেলায় এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে পানির অভাবে পাট জাগে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে সমস্যা কেটে যাবে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাট জাগে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে পাটের ছাল বা বাকল কাঁচা পাট গাছ থেকে আলাদা করার পর অল্প পানিতে পচানো হয়। অর্থাৎ কাঁচা পাট গাছ থেকে ছাল বা বাকল আলাদা করার পর ঐ ছাল বা বাকলকে যে পদ্ধতিতে অল্প পানিতে পচানো হয়, তাকে রিবন রেটিং বলা হয়। এ রিবন রেটিং পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে কতটুকু সাড়া ফেলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে চাষীদেরকে সচেতন করা হচ্ছে। তবে উল্লেখযোগ্য তেমন সাড়া এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।