মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামে দুই কিশোর-কিশোরীর গভীর প্রেমে জীবন দিলো প্রেমিকা।
একসময় ভালোবাসায় প্রেমিকের পরিবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তখনই বাঁচতে হলে এক সাথে বাঁচবো, মরতে হলে এক সাথে মরবো এমন প্রতিজ্ঞা করে দুজনই। ভালোবেসে বিয়ে না করাই প্রেমিকের মিথ্যা নাটকে হারপিক পান করতে বাধ্য হয়।
অবশেষে ২ মাসের অধিক সময় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রবিবার (৩১ জুলাই) সকালে মৃত্যুবরণ করে নবম শ্রেনীর মেধাবী শিক্ষার্থী সুম্মা খাতুন (১৫)।
সুম্মা সহড়াতলা গ্রামের স্কুল পাড়ার রেজাউল হকের ছোট মেয়ে। তার মৃত্যু সংবাদে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বিকেলে তার মরদেহ গ্রামে পৌছায়।
পারিবারিক ও স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, প্রতিবেশী সাইদুর রহমানের স্কুল পড়–য়া ছেলে সেলিম রেজা স্বাধীনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুম্মার।
কিছু দিনের মধ্যে উভয় পরিবারে জানাজানি হয় সম্পর্কের কথা। স্বাধীনের পরিবারকে বিয়ে প্রস্তাব দেয় সুম্মার পরিবার। বিয়ের বিষয়টি স্বাধীনের পরিবার প্রত্যাখান করলেও সুম্মার সাথে কথা হয় স্বাধীনের।
দুজনেই প্রতিজ্ঞা করে বিয়ে না হলে দুজনেই এক সাথে বিষ পান করবো। যে কথা সেই কাজ। স্বাধীনের পরিবার থেকে প্রেমে বাঁধা আর চাপাচাপিতে সুম্মা ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয় একই সাথে আত্মহত্যার।
প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী গত ২২/৫/২০২২ ইং তারিখে বাথরুমে গিয়ে হারপিক পান করে সুম্মা। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে মূর্মূষ অবস্থায় সুম্মাকে উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার অবনিত হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে অবস্থার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
দীর্ঘ দুই মাস দশ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনিষ্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় রবিবার সকালে তার তার মৃত্যু হয়।
সুম্মার বড় বোন রুপালী খাতুন জানান, স্বাধীন আমার বোন সুম্মার সাথে প্রতারণা করেছে। তারা দুজনে এক সাথে মরার মিথ্যা কথা বলে আমার বোন হারপিক পান করিয়েছে।
আমার বোন আজ মারা গেছে আর স্বাধীন বিষ পান না করে সুস্থ ঘুরে বেড়িয়েছে। স্বাধীন আমার বোনকে মুত্যুর প্ররোচণা না দিলে কখনো আমার বোন হারপিক পান করতো না। আমরা স্বাধীনের উপযুক্ত শাস্তি চাই। সুম্মা মৃত্যুর আগে একটি আত্মহত্যার প্ররোচনা বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তা (রেকর্ড) দিয়ে যায়।
সুম্মার পিতা রেজাউল হক বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য আমি একাধিকবার স্বাধীনের পরিবারের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা মেনে নেয়নি। আমার মেয়ের সাথে স্বাধীন মৃত্যুর জন্য পত্রিজ্ঞা করেছে কিন্তু আমার মেয়ে একাই সেই প্রতিজ্ঞা রাখতে গিয়ে আমার বুক খালি হয়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি পথের ফকির হয়ে গেছি তবুও আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। একথা জানাতেই মুর্ছা যায় সুম্মার পিতা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম নাটু জানান, প্রেমের সম্পর্কের কারনে মেয়েটি দুই মাস আগে হারপিক পান করেছিল। এতে তার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি হলো।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান, আমি এঘটনা শুনেছি। গ্রামের মানুষও বিভিন্ন ভাবে মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা করেছে। কিন্তু যার জন্য মেয়েটি আতœহত্যা করলো সেই পরিবারের লোকজন একটু সহযোগীতা বা সহানুভুতি দেখাইনি। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার আর অবতারন দেখতে চাইনা।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।