• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রীতিলতার

বিবর্তন প্রতিবেদক
Update : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রীতিলতার
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রীতিলতার

বাঁকা দুই পায়ে কোন শক্তি নেই কিন্তু আছে শুধু দৃঢ় মনোবল। ছোটবেলায় প্রীতিলতা স্কুলে যেতেন নানার কাঁধে চড়ে। একটু বড় হলে নানার সাইকেলের পেছনে বসে। কলেজে উঠতে উঠতে নানার মৃত্যু হলে প্রীতিলতার পথচলার সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। পাশে পান মা আর বান্ধবীদের। এভাবেই গ্রামের কলেজে পড়াশোনা করে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুরে গ্রামে মায়ের সঙ্গে প্রীতিলতা সাহার (২০) বসবাস। এখন তার আশা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন। পড়ালেখা শেষ করে ভালো মানুষ হবেন, একটা চাকরি করে ভূমিহীন বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়াবেন।

প্রীতিলতার বাবা প্রয়াত প্রশান্ত সাহার বাড়ি ছিল যশোর সদর উপজেলার বারিনগর গ্রামে। মাত্র ৬ বছর বয়সে বাবাকে হারান প্রীতিলতা। এরপর মা সুজাতা সাহা তাকে নিয়ে চলে আসেন কালীগঞ্জের মোস্তবাপুরে নানার বাড়িতে। সেখানেই বেড়ে ওঠা প্রীতিলতার।

প্রীতিলতার মা সুজাতা সাহা বলেন, বিয়ের পর তারা স্বামী-স্ত্রী ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ নেন। তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে প্রিয়াংকা সাহাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে প্রীতিলতার জন্ম থেকেই দুই পা বাঁকা। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এ কারণে তাকে বাড়িতে রেখে যান। ঢাকায় চাকরিরত অবস্থায় ২০১১ সালে তার স্বামী প্রশান্ত সাহা অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়ির জায়গাটি হাতছাড়া হয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি চলে আসেন বাবার বাড়ি। এখানে প্রীতিলতাকে রেখে তিনি আবার ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজে যান।

ছোটবেলা থেকেই প্রীতিলতার পড়ালেখার প্রতি বেশি আগ্রহ। সেই আগ্রহের কারণে নানা শান্তি স্মরণ সাহা তাকে বাড়ির পাশে ফারাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। এরপর মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শান্তি স্মরণ সাহা প্রথম দিকে কাঁধে করে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাকে সহযোগিতা করতেন। কিছুদিন পর বাইসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতেন আবার নিয়ে আসতেন। এভাবে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রীতিলতা জিপিএ-৪.৮৬ পান। এরপর তিনি বাড়ির সবচেয়ে কাছের কলেজ শহীদ নূর আলী কলেজে ভর্তি হন।

সুজাতা সাহা জানান, নানা শান্তি স্মরণ মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়েন প্রীতিলতা। মায়ের ওপর নির্ভরতা বেড়ে যায়। তিনি বাড়ি চলে আসেন। মেয়েকে গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে কাজে যান। মেয়ে কলেজের সামনে নামার পর বান্ধবীদের এগিয়ে দেওয়া হুইলচেয়ারে করে ক্লাস করতেন। এভাবে চারতলা ভবনে উঠে তাকে ক্লাস করতে হয়েছে।

সুজাতা সাহা বলেন, নিজেদের কোনো জায়গাজমি নেই। বসবাসের কোনো ঘরও নেই। তার গ্রামের অগ্নি সাহা শহরে বসবাস করেন। তার রেখে যাওয়া বাড়িতে তারা থাকেন। নিজে দিন ২০০ টাকা চুক্তিতে একটি কারখানায় কাজ করেন। এই টাকায় চলে তাদের সংসার ও মেয়ের পড়ালেখা।

প্রীতিলতার কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ রাশেদ সাত্তার বলেন, মেয়েটি মানবিক বিভাগের ছাত্রী আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী। সেই হিসেবে ভালো ফল করেছেন। পড়ালেখার প্রতি তার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। তারা কলেজে পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষকেরা তাকে প্রাইভেট পড়িয়ে পয়সা নেননি, কালীগঞ্জবাসীও অনেকে তার সহযোগিতা করেছেন। মেয়েটির মনের জোর রয়েছে। তারা আশা করছেন, প্রীতিলতা আরও ভালো কিছু করতে পারবেন।

প্রীতিলতা সাহা বলেন, কষ্ট করে পড়ালেখা করে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এখন তার চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। তার ভাবনা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে ট্রেনে চেপে যেতে পারবেন। অন্য যানবাহনে যাওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়বে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category