• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন

ঝিনাইদহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির নামে পরিবারিক কমিটি গঠনের অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
Update : শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২
অভিযোগ
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির নামে পরিবার কমিটি গঠনের অভিযোগ

ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নীতিমালা উপেক্ষা করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ইসলামপুর (হরিপুর) কেএফএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নামে গোপনে পরিবার কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বিষয়টি নিয়ে গঠনকৃত নতুন কমিটিতে নাম দেওয়া কয়েকজন সদস্যর পদত্যাগ করা সহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি প্রভাবশালী মহলকে হাত করে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে পছন্দের লোকজন দিয়ে গত ২০ মে একটি পরিবার কমিটি গঠন করেন।

পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে, চলতি জুন মাসের ২ তারিখে সদ্য এই কমিটিতে থাকা ৩জন অভিভাবক সদস্য তাদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং আরও কয়েকজন পদত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এছাড়াও ঐ পরিবার কমিটি অবিলম্বে বাতিল করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন স্কুলের একাধিক ছাত্রের অভিভাবকগন। এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তারা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও তা গোপন রেখে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়ে ঝিনাইদহ শহরের একটি গোপন ঘরে বসে পরিবার কমিটি গঠন করে যশোর শিক্ষাবোর্ডে জমা দিয়েছেন।

এতে প্রধান শিক্ষকের আপন ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেনকে সিলেকশনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। জাহাঙ্গীর হোসেন অত্র বিদ্যালয় থেকে ৬০/৭০ মাইল দুরে একটি কলেজের শিক্ষকতা করেন এবং সেখানেই অবস্থান করেন। সুত্রটি জানায়, প্রধান শিক্ষক কমিটি গঠনের পূর্বে কোন প্রচারণার নিয়ম পালন করেননি। যে কারণে প্রধান শিক্ষকের এই গোপন কমিটি করাকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম অশান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ কারিরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে কমিটি গঠনের কথা না বলে ঝিনাইদহ শহরের একটি গোপন ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে এই কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে তারা জানতে পারেন, নতুন এই কমিটিতে যাকে সভাপতি বানানো হয়েছে তিনি প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনের আপন ছোট ভাই। এছাড়াও ঐ স্কুলে কর্মরত হাসানুর রহমানকে প্রতিস্ঠাতা সদস্য ও এমদাদুর রহমানকে বানানো হয়েছে দাতা সদস্য। এরা দুজনই প্রধান শিক্ষকের আপন চাচাতো ভাই।

স্কুলের বর্তমান সভাপতি খুরশিদ আলম সুজন অভিযোগ করে বলেন, আমাকে না জানিয়ে আমার কিছু সিগনেচার জাল করে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার চিন্তা থেকেই তিনি এই পরিবার কমিটি গঠন করেছেন, যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।

তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য খসড়া ও চুড়ান্ত ভোটার তালিকা আমি বর্তমান সভাপতি থাকা সত্ত্বেও আমাকে না জানিয়ে আমার স্বাক্ষর জাল করে শ্রেনী কক্ষে পাঠ করে নতুন নির্বাচন অফিসার নিয়ে এই কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছিলেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি জানতে পেরে গত ১০মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করি। যার অনুলিপি যশোর শিক্ষাবোর্ড, ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ঝিনাইদহে প্রেরণ করেও কোন লাভ হয়নি।

এদিকে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে সনদ জালিয়াতি করে চাকরি করার আরেক অভিযোগ। অভিযোগকারীরা বলেন, কয়েক বছর আগে তার একাডেমিক্যাল সনদ ভুয়া হিসেবে প্রমানিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। যে কারণে এমপিওভুক্ত থেকে তার নাম কাটা পড়ে।

কোন এক অজ্ঞাত কারিশমার কারনে তিনি পুনরায় বহাল করেন এমপিও। যে বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট হয়ে আছে এলাকাবাসীর কাছে। বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে তদন্ত করে জনগণের সামনে সচ্ছতা আনারও দাবি জানান বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খুরশিদ আলম সুজন।

তিনি বলেন, সনদ জালিয়াতি করে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন একাই নন, হাসানুর রহমান নামে তার আরেক চাচাতো ভাইকেও ঐ স্কুলে চাকরি করাচ্ছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সমস্ত নিয়ম মেনেই এই কমিটি করা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে কেন কমিটি গঠন করা হলোনা জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাচন দিলে মারামারির আসংখ্যা ছিলো। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার সাহেব চাননা যে, নির্বাচন দিয়ে এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি হোক। যে কারণে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সচ্ছ ভাবেই কমিটি গঠন করেছি মূলতঃ একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

নির্বাচন না দেওয়ার বিষয়টি ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন আমার রেফারেন্স দিয়ে যে কথা বলেছেন, তা সম্পুর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং ইসলামপুর (হরিপুর) কেএফএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক গোপনে যে একটি পরিবার কমিটি গঠন করা হয়েছে, এবিষয়টি পরে জানতে পেরে কমিটি যেনো এপ্রুভাল না হয় তার জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডে আমি কথা বলেছি।

কমিটি বাতিল করার দাবি জানিয়ে অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম্বারে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category