• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

গাংনীতে দিনব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত

বিবর্তন প্রতিবেদক
Update : শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
গাংনীতে দিনব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত
গাংনীতে দিনব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত

কয়েক ঘন্টার জন্য বয়োস্ক ও বৃদ্ধরা ফিরে গিয়েছিলো শৈশবে। শিশু-কিশোরেরা পেলো নতুন করে ঐতিহাসিক খেলার স্বাদ। কয়েকজন বয়ষ্ক ও কিশোরের তেল মেখে তৈলাক্ত কলা গাছে ওঠার চেষ্টা। কেউবা আবার দৌড়াচ্ছে চটের বস্তা পরে। আবার একদল বাচ্চারা ডিগবাজি দিয়ে অতিক্রম করছে গন্তব্য। কেউবা চোখ বেঁধে হাস ধরার চেষ্টা করছেন। এমন সব ইভেন্ট নিয়ে ব্যতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। শুক্রবার দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় করেছিল বিভিন্ন এলাকার হাজারো কৌতূহলী মানুষ। এ খেলার উদ্বোধন করেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।
আয়োজকরা জানালেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম্য খেলাধুলাকে নতুন করে পরিচিত করতেই প্রতিবছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়রা স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহনের পাশাপাশি হাততালি, হইহুল্লোড়ে উৎসাহ দিয়েছেন প্রতিযোগীদের। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতী ও বাল্য বিয়ের বিষয়টিও তুলে ধরা হয় নানাভাবে।
বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক জান মোহাম্মদ মিন্টুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ষোলটাকা ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন (পাশা), সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, গাংনী প্রেক্লাবের জ্যোষ্ঠ সাংবাদিক মজনুর রহমান আকাশ ও ষোলটাকার ছয় নং ওর্য়াড মেম্বর আব্দুল কুদ্দস প্রমুখ।
দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত খেলাগুলোর মধ্যে আকষনীয় ছিল- প্লেটে র্মাবেল উত্তোলন, ইট পায়ে হাটা, ঘরে বাইরে, চেয়ারে বসা. গুপ্ত ধন অনুসন্ধান, অংক দৌড়, বন্ধ চোখে হাসঁ ধরা, ডিগবাজী, বস্তার উপরে বসে বস্তায় টানাদৌড়, বালিতে ঝুলিয়ে বল নিক্ষেপ, গামলার ভিতরে বেলুন ফোঁটানো, পিঠে হাড়ি ভাঙ্গা, স্বামীর পেটে স্ত্রীর বল নিক্ষেপ, স্বামী-স্ত্রী দড়ি টানাটানি, হাড়ি ভাঙ্গা, ধীর গতিতে মটর সাইকেল চালোন, মেরুদন্ড শক্তির পরিক্ষা, তৈলাক্ত কলা গাছ উঠা, বালিশ লড়াই, সাবান মাখা প্রতিযোগিতা ও অন্ধভাবে পথ চলা।
খেলা দেখতে যাওয়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, কম্পিউটার, মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যেই বিভিন্ন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। ২০ বছর আগে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ডাংগুলি, বউ তোলা, ঘুড়ি ওড়ানো, হাড়ের গুটি খেলা, কলাগাছে ওঠা, রশি টানাটানিসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় মত্ত থাকত সারাবেলা। সেই হারানো খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। এ খেলার আয়োজন করায় নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ খেলাধুলার পরিচিতি পাচ্ছে।
অস্টেলিয়া থেকে নানা বাড়িতে বেড়াতে আসা ও অংক দৌড়ে প্রথম হওয়া জিসান জানান, বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলার গল্প শুনেছেন। এবার দেশে এসে খেলা দেখা ও অংশ নিয়ে প্রথম হওয়ায় বেশ আনন্দিত ও উদ্বেলিত। এটি তার স্মরণীয় হবে থাকবে বলেও জানান এই প্রবাসী।
চেয়ারে বসা খেলায় অংশ নেয়া গাংনী মহিলা কলেজের ছাত্রী শ্রাবন্তী জানান, বর্তমানে আধুনিক যুগে সব ছেলে মেয়েরা মোবাইল গেমে আসক্ত। এতে অনেকেই বিপদগামী হচ্ছে। গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন ও প্রচলন নিয়মিত থাকলে অনেকেই এসব খারাপ পথ থেকে সরে আসবে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি জান মোহাম্মদ মিন্টু জানান, গ্রামীন খেলা ধুলাকে ধরে রাখার জন্য এই খেলাধুলার আয়োজন। এই খেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হয়। কোভিড এর কারনে দুই বছর হয়নি। ১১ বছরে ধরে এই খেলাধুলা চালিয়ে আসেছেন চেংগাড়া গ্রামের লোকজন। দূর দুরন্ত থেকে এখানে খেলা উপভোগ করতে আসেন। বিভিন্ন বয়সের মানুষ তারা উপভোগ করে এবং আনন্দ পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলোর আজ বিলপ্তির পথে গ্রামীণ খেলাগুলো অস্তিত্ব খুজেঁ পাওয়াই কঠিন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রাম বাংলার খেলাধুলা আজ রুপকথার ন্যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচলন ছিলো। কালের বির্বতনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপে ভিডিও, এসব খেলার কারনে গ্রামীণ খেলা গুলো বিলুপ্তির পথে। এ আয়োজন একটি ইতিবাচক দিক। প্রতিবছর এমন আয়োজন রাখার অনুরোধ জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category