কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় শুরু হলো তিনদিন ব্যাপী লালন স্মরণোৎসব। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র গান, বাউল মেলা ও সাধুসংঘের মধ্য দিয়ে শনিবার (৪ মার্চ) থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনী ও আলোচনা সভা শুরু হয়েছে সন্ধ্যা থেকে। ভক্ত অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আখড়াবাড়ির প্রাঙ্গন ধুয়ে মুছে সাফ করে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ। মরমী এ সঙ্গীত সাধকের স্মরণোৎসব উপলক্ষে তাঁর সাধন-ভজনের তীর্থ স্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন পরিণত হয়েছে এখন উৎসবের পল্লীতে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজন’সহ অসংখ্য মানুষের। উৎসব শুরু আজ ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬:৩০মি: থেকে স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের স্মৃতিচারণ করে আলোচনা, লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা। কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেঁউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পহেলা কার্তিক ও ইংরেজী ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমী সাধক লালন শাহ’র শেষ শয্যা রচিত হয়। গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহ’র জীবদ্দশায় দোল পুর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোল পুর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ
লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে ‘লালন স্মরণোৎসব’ হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোল পূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন। সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোল পূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপুর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়। চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে।
পরের দিন চারটায় ‘পুণ্যসেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূল মঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে আরও দু দিন। তাঁরা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে।লালন স্মরনোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে প্রতিবছরই বসে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা।
৪ মার্চ শনিবার দোল পুর্ণিমার রাতে শুরু হয়ে তিনদিন ব্যাপি চলবে লালন স্মরণোৎসব। শুরুর দিনই সন্ধ্যায় তিন দিনব্যাপি লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ। এতে সভাপতিত্ব করেন লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। অনান্যবারের তুলনায় এবারে আরও বেশি লোক সমাগম ঘটবে লালন ভক্ত অনুসারীদের।
আর এ উৎসবকে নির্বিঘ্ন রাখতে কয়েক বলয়ে নিরাপত্তামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। ৫ মার্চ সন্ধায় যথারিতি আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে। তিনদিনের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লালন মেলায় চলবে লালন সংগীত এই লালন সংগীতের মধ্য দিয়ে তিনদিন ব্যাপী লালন মেলার সমাপ্তি ঘটবে।