• শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
গাংনীতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ গাংনীতে অবৈধভাবে সার মজুদের অভিযোগে ব্যবসায়ীকে জরিমানা মুজিবনগরে মাদক ও অবৈধ ভারতীয় মালামালসহ চার চোরাকারবারী আটক মেহেরপুরে পালিত হলো বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস মেহেরপুরে তীব্র কুয়াশার সাথে বাড়ছে শীত মুজিবনগরে উচ্চমূল্যে সার বিক্রির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে জরিমানা দৌলতপুরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন মেহেরপুরে অবৈধভাবে সার মজুদের দায়ে ব্যবসায়ীকে লাখ টাকা জরিমানা মেহেরপুরে খাদ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে ধ্রুবতারা’র বিভিন্ন কমর্সূচী পালন গাংনীতে গ্রাম পুলিশের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনি অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর অভূতপূর্ব সোলার প্যানেল রিসাইক্লিং আবিষ্কার

বিবর্তন প্রতিবেদক
Update : বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩
বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর অভূতপূর্ব সোলার প্যানেল রিসাইক্লিং আবিষ্কার
বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর অভূতপূর্ব সোলার প্যানেল রিসাইক্লিং আবিষ্কার

ব্যবহারের পরে ফেলে দেওয়া সোলার প্যানেল থেকে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ন্যানো সিলিকন তৈরী করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ড. মো. মোখলেছুর রহমান। নতুন এই প্রযুক্তিটি ৯৯ শতাংশের বেশি বিশুদ্ধ সিলিকন পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং উচ্চ মানের ন্যানো সিলিকনে পরিণত করতে পারে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩৫ লক্ষ টাকা।বর্তমানে সোলার প্যানেল পুনর্ব্যবহার করা বিশ্বের একটি বড় সমস্যা।
একটি সোলার প্যানেল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০-২৫ বছর চলে, তারপর ফেলে দিতে হয়। ধারণা করা হয়, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে মেয়াদোত্তীর্ণ সোলার প্যানেলের পরিমাণ হবে প্রায় ৭৮ মিলিয়ন টন। এটা আতংকের ব্যাপার কারণ সোলার প্যানেলে সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, এবং বেরিয়ামের মতো ভারী ধাতু থাকে। এই বিপজ্জনক উপাদানগুলো সহজেই মাটি এবং ভূগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে যেতে পারে, যা মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। ড. মোখলেছুর রহমানের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ সোলার প্যানেলগুলোকে ঝুঁকি এড়িয়ে পুনরায় কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
তাঁর উদ্ভাবিত ন্যানো-সিলিকন আর গ্রাফাইটের মিশ্রণে একটি নতুন ধরনের ব্যাটারি তৈরি করা যায় যা বর্তমান ইলেক্ট্রিক কারের ক্ষমতা দশগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ব্রেকথ্রু রিসার্চ এরই মধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে।
ড. মো. মোখলেছুর রহমান ১৯৭৬ সালে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার মহব্বতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ভাই আহসান হাবীব গাংনী সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ক্রিড়া শিক্ষক। মোখলেছুর রহমান ১৯৯০ সালে গাংনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯২ সালে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে বিএসসি (অনার্স) এবং এমএসসি (থিসিস গ্রুপ) সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল রিসার্চে যোগদান করেন এবং একজন গবেষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালে তিনি তার এমফিল প্রোগ্রামের জন্য ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া থেকে বৃত্তি পেয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি সফলভাবে ম্যাটারিয়ালস কেমিস্ট্রিতে তার এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০৮ সালে তিনি পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারী বৃত্তি (আইপিআরএস) পান এবং ২০১১ সালে তিনি ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাটারিয়ালস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিএইচডি প্রোগ্রামে তিনি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জন্য একটি নতুন ধরনের লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ক্যাথোড তৈরি করেছেন। এজন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মেরিট পুরস্কার পান।
২০১১ সালে পিএইচডি শেষ করার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ফ্রন্টিয়ার ম্যাটেরিয়ালসে (আইএফএম) রিসার্চ ফেলো হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সার্কুলার এনার্জি ম্যাটেরিয়াল ইউনিট, ন্যানোটেকনোলজি বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী এবং অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল রিসার্চ হাব ফর সেফ অ্যান্ড রিলায়েবল এনার্জি, আইএফএম, ডেকিন ইউনিভার্সিটির প্রধান গবেষণাকারী। ড. মো. মোখলেছুর রহমান বিজ্ঞান ও ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ন্যানোটেকনোলজি/এনার্জি স্টোরেজের ক্ষেত্রে শীর্ষ আন্তর্জাতিক জার্নালে তার ৭৫টিরও বেশি পিয়ার-রিভিউ প্রকাশনা রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে ৩০০টিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশে এনার্জি টিমকে তিনি সহায়তা করেছেন। গবেষণায় তার অসামান্য অবদানের কারণে তিনি বিভিন্ন সময় উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ জাতীয়/আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০১০ সালে ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিট অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে আলফ্রেড ডেকিন ফেলোশিপ পুরস্কার, ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা পরিচালনা করার জন্য অস্ট্রলিয়ান গভর্নমেন্ট এন্ডেভার রিসার্চ ফেলোশিপ পুরস্কার এবং ২০২০ সালে ভারতের সায়েন্সফাদার আন্তর্জাতিক পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
২০২০ সালে তিনি এনার্জি গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীর মধ্যে স্থান করে নেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় কনফারেন্স বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর আমন্ত্রণ পান। তিনি এরই মধ্যে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে ৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক/জাতীয় কনফারেন্স অংশগ্রহণ করেছেন ।
ড. মো. মোখলেছুর রহমান ইলেক্ট্রোকেমিস্ট্রি এবং ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ফিল্ডে ৩০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী (পিএইচডি এবং মাস্টার ডিগ্রি) এবং ১০ জন পোস্টডক্টরাল ফেলোকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে বেশ কয়েকটি পিএইচডি প্রকল্পে জুনিয়র গবেষণা কর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছেন যারা ন্যানোটেকনোলজি ফিল্ডে কাজ করছেন। ড. মো. মোখলেছুর রহমান বাংলাদেশের সম্ভাব্য পিএইচডি স্কলারদের সাথে কাজ করতে চান যারা ন্যানো প্রযুক্তি, বিশেষ করে এনার্জি স্টোরেজ এবং এনার্জি কনভার্সন ফিল্ডে বিজ্ঞানী হিসাবে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category