• শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

কুষ্টিয়ায় খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

ইসমাইল হোসেন, কুষ্টিয়া: / ১১৮ Time View
Update : শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২
ব্যস্ত গাছিরা
কুষ্টিয়ায় খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

হেমন্তে শিতের আভাস কুষ্টিয়ায় জন জীবনের স্বাভাবিক রুটিনে পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। রাস্তায়, জমিতে কিংবা পুকুরে, মাঠে-ঘাটে খেজুরের গাছের আশেপাশে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

শীততের শুরু থেকেই খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা অনেক। সেই সাথে শীত যত বাড়ছে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদাও বাড়ছে। তাই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় খেজুর রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে খেজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরি হয় নানান রকমের বাহারি পিঠাপুলি ও পায়েস। তাই বানিজ্যিক ভাবেও খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা।

গাছিরা জানায়, প্রতিদিন বিকালে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় মাটির কলস বেঁধে রাখা হয় রসের জন্য। পরদিন সকালে ওইসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়। অনেকেই আবার এই রস দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে থাকেন।

জানা গেছে কুষ্টিয়ার সদর, কুমারখালী, খোকসা, ভেড়ামারা, মিরপুর এবং দৌলতপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে খেজুর গাছের সংখ্য বেশি। এসব খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ ও গুড় তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন গাছিরা। আবার বাড়তি লাভের আশায় এসব এলাকায় আসছেন অন্য জেলার গাছিরাও। খেজুর গুড় তৈরির পেশায় এখন বাড়তি আয়ে খুশি তারা।

কুষ্টিয়া বাইপাস ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় খেজুর গাছের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি রয়েছে। ২৮০টি খেজুর গাছ ৯৫ হাজার টাকায় রাজশাহীর গাছি সিহাব উদ্দিনের চারজনের একটি দল ৪ মাসের জন্য লিজ নিয়েছেন। সিহাব জানান, এবছর কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বাইপাস ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় সড়কের ধারে ২৮০টি খেজুর গাছ লিজ নিয়েছি। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকায় শীতের ৪ মাসের জন্য খেজুর গাছগুলো লিজ নেওয়া হয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। এছাড়াও খেজুরের রসও বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস ১০ টাকা দরে রস বিক্রি করা হয়। কেউ এক গ্লাস খাই অনেকে দুই গ্লাস তিন গ্লাস এভাবে খায়। প্রায় বিশ বছর ধরে এভাবে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এরপর এসব রস দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করি।

সিহাব আরো জানান, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের প্রায় চার মাস রস সংগ্রহ করা যায়। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা সংসার চালাই। শীতের পিঠা ও পায়েসের জন্য খেজুরের রস ও গুড়ের বাড়তি চাহিদা রয়েছে।

স্থানীয় খেজুর রস ক্রেতা আব্দুল সামাদ জানান, শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এছাড়াও জ্বাল দেওয়া রসের তৈরি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার অতুলনীয়।

কুষ্টিয়ার পরিবেশবিদ গৌতম কুমার বলেন, খেজুর পরিবেশ বান্ধব, স্থান সাশ্রয়ী একটি বৃক্ষ প্রজাতি। এ প্রজাতি দুর্যোগ প্রতিরোধী বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে খামারিরা আর্থিক লাভবান ও স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত বেশ সুপ্রাচীন। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং মৌসুমি কর্মসংস্থানে খেজুর গাছের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে বাংলাদেশের সর্বত্রই খেজুর রস, খেজুর গুড় দারিদ্র্য বিমোচনসহ বাঙালি সাংস্কৃতিতে রসঘন আমেজ লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের মাটি ও কোমল প্রকৃতি খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড় এমনকি খেতের আইল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!