• শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৬:১০ অপরাহ্ন

গাংনীতে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন জমিতে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ

বিবর্তন প্রতিবেদক / ১৭১ Time View
Update : সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২
গাংনীতে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন জমিতে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ
গাংনীতে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন জমিতে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ

উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিরোধপুর্ণ জমিতে জোর পুর্বক বাড়ি ঘর নির্মাণ করছেন একটি পক্ষ এমনি অভিযোগ উঠেছে। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী পৌরসভা এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন পাড়ায়। প্রধান সড়ক সংলগ্ন জমি হওয়াতে জমি দখলে নিতে প্রভাবশালীদের সাথে আতাত করেই বাড়ি নির্মান করছেন এক পক্ষ। অপর পক্ষ প্রভাবশালী না হওয়া আদালতের রায়ের অপেক্ষায়। কিন্তু জমি দখলে নিতেই তড়িঘড়ি নির্মাণ কাজ করছেন। তবে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছে স্থানীয়রা। তবে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিভিন্ন সময়ের অভিযোগে জানা গেছে, বিরোধপূর্ণ জমিটির মালিক মোছাঃ ফতেজান নেছা ও আব্দুল মোতালেব। এই দুজনের মধ্যে মোছাঃ ফতেজান নেছার ওয়ারিশ রেজাউল হক ও সিরাজুল ইসলাম গং এবং আব্দুল মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং।
উক্ত ৫৪ শতক জমির মধ্যে মেহেরপুর মুন্সেফ আদালতে ফতেজান নেছার ওয়ারিশগন উক্ত দাগে রায়ের বলে ২৭ শতক জমির মালিক হন। পরবর্তিতে আঃ মোতালেব জেলা জজ আদালতে আপিল করলে জেলা জজের ২য় রায়ে প্রথম রায়টি কারো পক্ষে না দিয়ে স্থগিত করেন (উভয় পক্ষকে উচ্চ আদালত হইতে ফয়সালা নিতে হবে)। জেলা জজের ২য় রায়ের পর ফতেজান নেছার ওয়ারিশ রেজাউল হক ও সিরাজুল ইসলাম গং মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল রুল রিভিশন পিটিশন করেন যাহার মামলা নং ৩৫২৭/২০১২। উক্ত মামলাটি বর্তমানে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্রস্তত অবস্থায় বিচারাধীন আছে। উক্ত মামলা নিষ্পত্তি না হতেই আ: মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান উক্ত জমিতে জোর পুর্বক ভবন নির্মান কাজ শুরু করেছেন। উক্ত নির্মান কাজকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার উদ্ভব ঘটেছে। উক্ত নির্মান কাজ প্রশাসন বা আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা না হলে উভয় পক্ষের মধ্য যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা এমনকি জিবনহানীও ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গাংনী বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সূধীজনদের আশংকা, ওখানে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটবে এবং জায়গাটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় বাজারে আইন সৃঙ্খলার বড় ধরণের অবনতি দেখা দিতে পারে। বাজার এলাকার অনেক ব্যাবসায়ী ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে আলাপ করে জানা যায় উক্ত বিরোধপুর্ণ জমিতে নির্মাণ কাজ দ্রুত বন্ধ না করা হলে যে কোন সময় উভয় পক্ষের মধ্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।

আরো জানা যায়, ফতেজান নেছার ওয়ারিশগন রেজাউল হক ও সিরাজুল ইসলাম গং এক বছর পুর্বে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মেহেরপুরে উক্ত জমিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আবেদন করলে আদালত উক্ত জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। আঃ মোতালেবের ওয়ারিশগন জেলা জজ আদালতে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল পিটিশন করলে উক্ত মামলা জেলা জজ কর্তৃক পুনরায় জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত জমিতে প্রকৃত অবস্থা কি সেটা জানতে চেয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাংনী থানাকে সরজমিনে তদন্ত পুর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলে গাংনী থানা উক্ত জমিতে সরজমিনে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে তদন্তে (ওসি) গাংনী থানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন উক্ত বিরোধপুর্ণ জমিতে নির্মাণ কাজ করলে উভয় পক্ষের মধ্য বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রানহাণীর আশংকা রহিয়াছে।

ওসি গাংনী থানার প্রতিবেদনের উপর আস্থা রেখে মহামান্য জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট উভয় পক্ষকে সংযত থাকার জন্য এবং উক্ত জমিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য ১৪৪ ধারা বহাল রাখেন। আবার উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আ: মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং আপিল করিলে উক্ত পিটিশনটি নিষ্পত্তির জন্য জেলা জজ আদালত কর্তৃক অ্যাডিশনাল জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। অ্যাডিশনাল জজ আদালতে কয়েক বার শুনানির তারিখ থাকলেও শুনানি না হওয়ায় মামলাটি শুনানির পুর্বেই খারিজ করে দেন। উক্ত ১৪৪ ধারা খারিজ হওয়ার পর আ: মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জমির বাদী পক্ষের সাথে ও এলাকার লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়। জমির মুল মালিক ইরাদ আলী মোল্লা মেদিনিপুর জমিদার কোম্পানির নিকট হতে বন্দোবস্ত নেওয়া সম্পত্তি। ইরাদ আলী মোল্লার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ দুই ছেলে মোজাহার আলী মোল্লা, আহাম্মদ আলী মোল্লা ও এক মেয়ে আকিমন নেছা ওয়ারিশ হন। আহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ হন আ: মোতালেব মোল্লা। পরবর্তিতে আকিমন নেছার অংশ আ: মোতালেব ও মোজাহার আলী মোল্লা কিনে নেয়। এবার মোজাহার আলী তার অংশ উক্ত জমি তার স্ত্রী ফতেজান নেছার নামে দেন মোহর বাবদ উক্ত দাগে ২৭ শতকসহ অন্যান্য দাগ মিলে মোট ১০৭ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়। তার পর ফতেজান নেছা উক্ত জমি তার তিন ছেলে সিরাজুল, মোফাজ্জেল, ইকরামুলের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন। বর্তমানে রেজিষ্ট্রি সূত্রে তাহারা মালিক। মোতালেব হোসেনের মৃত্যুর পর তার ছেলে হাসান, জিয়া গং ওয়ারিশ সুত্রে বর্তমান উক্ত দাগের ৫৪ শতক জমির অর্ধেক ২৭ শতকের মালিক।

বাদী ফতেজান নেছার ওয়ারিশ সিরাজুল ইসলাম ও রেজাউল জানান, তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বিবাদী মোতালেব হোসেনের ওয়ারিশগন হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে ভাড়াটিয়া লোকজন সাথে নিয়ে দিনে ও রাতের বেলায় বিদ্যুতের বাতি লাগিয়ে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলেও জানান বাদী পক্ষের লোকজন।
মামলার বিবাদী মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গংয়ের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। সেহেতু এখানে থানা পুলিশের কিছুই করার নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
error: Content is protected !!