নোট দিয়ে ভোট কিনে পরাজিত হয়ে নোট আদায়ে জোট বেঁধেছে দুই প্রার্থী। সদ্য শেষ হয়েছে জেলা পরিষদের নির্বাচন। তফশিল ঘোষনার পর থেকেই হাজারো আলোচনা সমালোচনার শেষ ছিলোনা কোথাও। তবে এ নির্বাচনে শুধু জনপ্রতিনিধিরাই ভোটার তাই সংখ্যায় কম হলেও আলোচনার শীর্ষে ছিলো কোন প্রার্থী কত টাকা ব্যায়ে কত ভোট কিনলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্য হতে পারবে। যদিও এভাবে টাকা দিয়ে ভোট কেনা বা টাকা নিয়ে ভোট বিক্রি আইনত দন্ডনীয়। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই সবাই চাই ভোট কিনতে অথবা বিক্রি করতে। কিন্তু এই নির্বাচনে টাকা নিয়েই বিপদে পড়েছে জাদরেল জনপ্রতিনিধি ভোটাররা।
জেলার তিন উপজেলার মধ্যে সব সময়ই আলোচনার শীর্ষে ছিলো গাংনী উপজেলা। এ উপজেলায় ১ টি পৌরসভাসহ মোট ১০ টি পরিষদের ভোটার সংখ্যা ১৩০ ও উপজেলা পরিষদের তিন জন মিলে ১৩৩ টি ভোটারের মধ্যে ১ জন ইউপি সদস্য মৃত্যু বরণ করায় ১৩২ জন ভোটার।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, প্রতিটি পরিষদের ১৩টি ভোট। তবে অধিকাংশ পরিষদের ১৩ টির জায়গায় ৩৯ বা তার চেয়ে বেশি ভোট বিক্রি হয়েছে। ভোটের দিনও আলোচনা সমালোচনা ছিলো এই ভোট বেচাকেনার এবং নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীরা টাকা উদ্ধার করতে হালখাতা করবে। সেই সমালোচনা ইতোমধ্যেই বাস্তবে রুপ নিয়েছে।
গত সোমবার(১৭অক্টোবর) জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন হয়। এতে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালাম।
অন্যদিকে সদস্য হিসেবে আলোচিত গাংনী ওয়ার্ডে বিজয়ী হয় মিজানুর রহমান।
এ ওয়ার্ডে সদস্য পদের জন্য চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করলেও আলোচনায় ছিলেন বিজয়ী প্রার্থীসহ তিন জন।
নিবার্চনে প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করেও নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবার দুই প্রার্থী জোট বেঁধে মাঠে নেমেছেন ভোট কেনা নোট ফেরত নিতে।
বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ফলাফল ঘোষণার ২৪ ঘন্টা পার না হতেই ভোটারকে দেওয়া টাকা ফেরত নিতে দুই প্রার্থী জোট বেঁধে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে গিয়ে টাকা ফেরত দিতে চাপ দিচ্ছেন।
বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গাংনী ওয়ার্ডে পরাজিত তিনজনের মধ্যে দু’জন প্রার্থী টাকা আদায়ে মাঠে নেমেছেন। একজন জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য মজিরুল ইসলাম, অন্যজন মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন মনোনীত প্রার্থী রাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মকলেছ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, এই দুজন প্রার্থীই আলাদাভাবে প্রতিটি ভোটারকে ১ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। ফেল করে সেই টাকা ফেরত নিতে আসছেন।
আপনারা সবার কাছেই ভোট বিক্রি করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে, তারা বলেন প্রথমে আমরা টাকা নিতে চাইনি কিন্তু তারা তখন বলে আপনি টাকা নিচ্ছেন না মানে আমাকে ভোট দিবেন না। এরকম বলার কারনেই আমরা টাকা নিয়েছি। অনেকেই বাধ্য হয়ে দু’জন চেয়ারম্যান ও তিনজন সদস্য প্রার্থীর টাকা ধরেছেন তার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যকে ভোট দিয়েছে।
কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন, মিজানুর রহমান হয়তো বেশি টাকা দিয়ে ভোট কিনেছে তাই সে বিজয়ী হয়েছে। তবে তারা দুজন যে ৭৮ টি ভোট পেয়েছে তাদের টাকাতো ফেরত নেওয়ার কথা না। তাহলে বাছাই করে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতে পারে। পরাজিত দু’জন প্রার্থীই আমার কাছে এসেছিলো আমি বলেছি মেম্বারদের সাথে কথা বলবো কিভাবে টাকা নিয়েছে এবং কিভাবে টাকা ফেরত দিবে শুনবো।
অপর এক চেয়ারম্যান বলেন, মজিরুল ইসলাম এর আগেও সদস্য ছিলো সেও ৫০ টি ভোট পেয়েছে। তবে আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্য মনোনীত প্রার্থী হাফিজুর রহমান মকলেছ ২৮ টি ভোট পেয়েছেন মানে এটা বুঝলাম যে এমপির দখলে রয়েছে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে ২৮ জন।
তবে এ অভিযোগ ভূয়া বলে দাবি করে হাফিজুর রহমান মকলেছ বির্বতন বাংলাকে জানান, আমরা জোট বেঁধে গেছি এসব ভূয়া কথা। গেলেতো সবাই দেখতো।
তবে মজিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সচেতন মহলের অনেকেই মন্তব্য করেন, শেষ পর্র্যন্ত জেলা পরিষদের নির্বাচনের হিসেবে বোঝা গেলো যে বেশি টাকা দিয়েছে সেই বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখন দেখার পালা আর কোন কোন প্রার্থী টাকা আদায়ে হালখাতার কার্ড হাতে নিয়ে মাঠে নামেন।